গ্রামীণ কৃষি ডেস্কঃ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বাড়ি পেয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিরা আজ কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে নিজস্ব ঠিকানা ও আশ্রয় পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলার সময় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঠালতলা গ্রামের পারভীন আবেগ-জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমি জীবনে কখনো এমন বাড়ি বানাতে পারিনি।’ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে পারভিন বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো কাজ নাই। আমাদের প্রায়ই না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। আমাদের কোনো বাড়ি ছিলো না। কখনো ভাবিনি আমাদের একটা বাড়ি হবে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের একটি ঘর ও জমি দিয়েছেন। আপনি অনেকদিন বেঁচে থাকবেন।’
পারভীনকে সান্ত¡না দেবার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাঁদবেন না। আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে আমি জনগণের স্বপ্ন পূরণ এবং দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনে মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না এবং আমি তা নিশ্চিত করব। একই সময়ে যাতে সকল মানুষ জীবন ও জীবিকার উপায় খুঁজে পেতে পারেন আমি তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
কয়েকদিন আগেও গৃহহীন থাকা মুক্তিযোদ্ধা অশোক দাসও একটি বাড়ি পেয়েছেন। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ডুমুরিয়া উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে মোট ১৪০টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে।
ডুমুরিয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী দেশের নিজস্ব সাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার অন্তর্গত কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজাবাড়ি গ্রাম, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার অনন্তর্গত গাজীপুর ইউনিয়নের ইকারতলী গ্রাম এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সাল্লা গ্রামের সাথেও যুক্ত হন।
সৈয়দপুর উপজেলার নিজবাড়ি গ্রামের একজন সুবিধাভোগী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তার জমি ও বাড়ি ছিলো না। ‘কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে আমাকে জমি, বাড়ি, সবকিছু দিয়েছে। আমি আনন্দে অভিভূত।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থনা করি, আপনি (শেখ হাসিনা) দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন যাপন করুন।’
সুবিধাভোগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য লেখা একটি ভাওয়াইয়া গান গেয়ে শোনান।
এছাড়া সিএনজি চালিত তিন চাকার গাড়ি চালক চুনারুঘাট উপজেলার ইকারতলী গ্রামের সুবিধাভোগী মো. নুরুল হুদা বলেন, তিনি তার পরিবার নিয়ে বনভূমিতে বসবাস করতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে জমিসহ একটি বাড়ি দিয়েছেন, যা আমাকে আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সুখে জীবন কাটানোর সুযোগ করে দেবে।’ নুরুল হুদা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তিনি আগামী দিনে দরিদ্র, গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষদের আরো সাহায্য করতে পারেন।
চুনারুঘাট উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের হাতে মোট ৭৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় যান, যেখানে ৩৪০টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ফাতেমা বেগম, যিনি একটি বাড়ি পেয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ঠিকানা ছিলো না। কিন্তু এখন আপনার উপহার (বাড়ি ও জমি) আমাকে একটি ঠিকানা দিয়েছে, যেখানে আমি আমার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে জীবন কাটাতে পারবো।’
এছাড়া ফাতেমা আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করেন যাতে তিনি আরো মানুষকে সাহায্য করতে এবং সুখী জীবন দিতে পারেন। পরে তারা তাদের আনন্দ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে একটি গম্ভীরা গান গেয়ে শোনান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৬৬,১৮৯টি বাড়ি বিতরণের উদ্বোধন করেন। বিশ্বে এই প্রথম ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে একই সময়ে এতো বিপুল সংখ্যক বাড়ি বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১,১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার ৬৬,১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। আগামী মাসে আরো প্রায় এক লাখ বাড়ি বিতরণ করা হবে।
এছাড়া মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) অধীনে আশ্রয়ন প্রকল্প ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩,৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে।