- নাজমুল হক বিলাস
মানুষের মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি অন্যতম চাহিদা হচ্ছে খাদ্য চাহিদা। খাদ্য উৎপন্ন হয় কৃষি কাজের মাধ্যমে। ওপর দিকে মানুষের সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য চাই একটি ভালো পরিবেশ। যে পরিবেশে সে সুস্থভাবে বেঁচে থেকে নিজের প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করতে পারে এবং। পরিবেশ যদি ভালো না হয় তাহলে শুধু খাদ্যের মাধ্যমে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। নানা প্রকার বিপদ আপদ তাকে ঘিরে থাকে এবং তার জীবন যাপন শান্তিময় হয় না। সেই সাথে থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার ফলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সবচেয়ে প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে বাতাস তথা অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এরপরের সবচেয়ে জরুরি বস্তুটি হচ্ছে পানি। পানিও আমাদের জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন, এরপর প্রয়োজন হচ্ছে খাদ্য। কথায় আছে, একজন মানুষ খাদ্য ছাড়া ২৭ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে, পানি ছাড়া ৪ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে কিন্তু বাতাস তথা অক্সিজেন ছাড়া কয়েক সেকেন্ডের বেশি বাঁচা সম্ভব নয়। অতএব খাদ্যের প্রয়োজন এর পাশাপাশি আমাদের পরিবেশের উপর জোর দিতে হবে। পরিবেশ আমাদেরকে সুস্থ-সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান কোন না কোনভাবে আমাদের সুস্থ ভাবে জীবন যাপনে সাহায্য করছে।
মূলত কৃষি এমন একটি পেশা যে কাজের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য চাহিদা যেমন পূরণ করা হয় তেমনি পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। কৃষি কাজের জন্যই মানুষ চারা রোপন করে, গাছ লাগায়, ফলমূল উৎপাদন করে, পশু পালন করে, নদী পুকুর পরিষ্কার করে মাছ চাষ করে, এসবই কৃষি কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এইসব কাজের মাধ্যমে একই সাথে পরিবেশ গড়ে ওঠে। একটা গাছ লাগানো মানেই হচ্ছে পরিবেশ রক্ষা করা। সাধারণ ফসল চাষ হোক, বৃক্ষ লাগানো হোক, বা যে কোন প্রকার কৃষি কাজই হোক না কেন এর মাধ্যমে পরিবেশ গড়ে ওঠে। কারণ প্রতিটি কাজের মাধ্যমে বাতাসের দূষিত পদার্থ কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমিয়ে তার পরিবর্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয় মানুষের প্রয়োজনে। এবং এই অক্সিজেন গ্রহণ করে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী জীবন ধারণ করে। অতএব গাছ ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।
কৃষি কাজের মধ্যে বিশেষ ধরনের কিছু ফসল চাষ করলে বা বিশেষ কিছু প্রকারের গাছ রোপন করলে পরিবেশ উন্নয়নের কাজ বা ভালো রাখার কাজ আরও ত্বরান্বিত হয়। তার মধ্যে একটি ফসল হচ্ছে ভুট্টা। সারা বিশ্বে প্রথম তিনটি মৌলিক খাদ্যের মধ্যে ভুট্টা একটি। প্রথম খাদ্যটি হচ্ছে ধান, এরপরের টি হচ্ছে গম, এর পরে ভুট্টা। অর্থাৎ মৌলিক খাদ্য হিসেবে অনেক দেশেই ভুট্টা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এবং ভুট্টার চাষও প্রচুর পরিমাণে হয়ে থাকে। ভুট্টার মাধ্যমে মূল খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভুট্টা গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভুট্টা গাছ বাতাস থেকে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে নেয়। ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেক কমিয়ে ফেলতে পারে ভুট্টা। যারা ভুট্টা নিয়ে কাজ করেন তারা দেখে থাকবে ভুট্টা গাছের পাতার সবুজ রং এর পরিমাণ অনেকটা গাঢ়। এর মূল কারণ হচ্ছে সালোকসংশ্লেষনের কারণে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং সেই সাথে অক্সিজেনও অধিক পরিমাণে উৎপন্ন করে পরিবেশকে নির্মল রাখে।
ভুট্টার মতো আরো একটি ফসল হচ্ছে ব্রুকলি। এই সবজি জাতীয় উদ্ভিদটি মূলত বিদেশি উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে চাষ হচ্ছে। এই সবজিটি জমিতে, ঘরের আঙিনায় বা ছাদে চাষ করা যায়। এই ব্রুকলি প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে নেয় এবং অনেক পরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন করে।
এবার একটি বিশেষ গাছের আলোচনা করা যাক। এই গাছটির নাম বাসক গাছ। এটি একটি ওষধি জাতীয় বৃক্ষ। রোগ নিরাময়ে এই বৃক্ষের ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখ্য বাসক গাছ তার সম প্রকার গাছের তুলনায় ৬ গুণ বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন করে। অতএব বাসক গাছ যদি ব্যাপকভাবে রোপন করা হয় বিশেষ করে শহর অঞ্চলগুলোতে, তাহলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের পরিবেশ ভাল থাকবে।
আরও একটি উদ্ভিদ হচ্ছে বাঁশ। বাঁশ মূলত ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। বাঁশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এর প্রয়োজন রয়েছে। এই গাছ যে কোন স্থানে চাষ করা যায়। বাঁশ গাছের বিশেষ গুণ হচ্ছে প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং আশেপাশের পরিবেশকে শীতল রাখে। ফলে গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ফসল সংগ্রহ করার পর ফ্রিজিঙ করে রক্ষার জন্য বাঁশ ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপরোক্ত ফসল এবং উদ্ভিদ সেই সাথে আরও এই প্রকারের গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ চাষ বা রোপন করার মাধ্যমে আমরা খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারি, আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের পরিবেশকে ভালো রাখতে পারি।
বিশ্বব্যাপী গ্লোবাল ওয়ারমিং নিয়ে যে কার্যক্রম চলছে সেই কাজের অনেকটাই সাহায্য হবে উপরোক্ত উদ্ভিদ গুলো চাষ বা রোপন করার মাধ্যমে। এভাবে কৃষি কাজের সাথে সাথে আমরা পরিবেশ উন্নয়নের কাজও করতে পারি।