বুধবার, মার্চ ২৬, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাইপার বেল্ট বামন গ্রহ প্লুটো

কাইপার বেল্ট বামন গ্রহ প্লুটো

অধ্যাপক ড.হোসেন মনসুর

সমগ্র বিশ্বে স্কুলে পড়ানো হত, সূর্যের নয়টি গ্রহ আছে, গ্রহগুলোর নামঃ বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। বুধ সূর্যের নিকটতম গ্রহ এবং সবচেয়ে দূরের গ্রহ প্লুটো। প্লুটো নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। ১৯৩০ সালে, প্লুটো আবিস্কৃত হয়। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে মানুষের ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৬ সালে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বস্তুওগুলোকে বিভাজনের ক্ষেত্রে সজ্ঞার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কাঠামো নির্ধারণ করেছেন। সৌর জগতের সেইসব বড় বড় অভীষ্ট বস্তুকে গ্রহ মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যেগুলো তিনটি সর্ত পালন করে। প্রথমত্ঃ সূর্যকে প্রদক্ষিন করে, দ্বিতীয়তঃ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি উপাদান (বস্তুর) শক্তিকে অতিক্রম করে মোটামুটি গোলকের আকার বিশিষ্ট বড় গ্রহ গঠন করে এবং তৃতীয়তঃ তার চলার পথের সকল বস্তুর ধবংসাবশেষ পরিস্কার করে। প্লুটো প্রথম দু’টি সর্ত পূরণ করলেও তৃতীয় সর্ত পূরণ করে না। প্লুটো অন্যান্য আটটি গ্রহের কক্ষপথ অতিক্রম করে এবং কক্ষপথে ছোট ছোট বস্তুর মেঘের মধ্যে ডুবে যায়। এর অর্থ হল, প্লুটোর কক্ষপথ পরিস্কার নয়। তাই, অনেকেই প্লুটোকে গ্রহ মর্যাদা দিতে নারাজ। প্লুটোর কক্ষপথ বলতে গেলে একেবারেই বৃত্তাকার। অন্যান্য গ্রহের কিন্তু ওতো বৃত্তাকার নয়, সত্য কথা বলতে কি, কিছুটা হলেও উপ-বৃত্তাকার। তাই অনেকে প্রশ্ন করেন, স্কুলে যা’ শিখেছি তা’ কি ভুল হয়ে যাবে? প্লুটোকের গ্রহের মর্যাদা থেকে নামিয়ে বাবন গ্রহ মর্যাদা দেয়ার সত্যিকারেই যথাযথ যুক্তি আছে, তবুও বিষয়টি স্পর্শকাতর। যাহোক, আমরা প্লুটোকে বাদ দিয়ে সূর্যের আটটি গ্রহ ধরেই আলোচনা করবো।গ্রহগুলোর কক্ষপথ আটটি গ্রহের কক্ষপথগুলো একই তলে অবস্থান করে না। বুধ ব্যতিত সৌর জগতের প্রায় সকল গ্রহের কক্ষপথ ক্রান্তিবৃত্তের (ecliptic) ৩ ডিগ্রীর মধ্যে অবস্থান করে। বুধ গ্রহের কক্ষপথ ক্রান্তিবৃত্তের সাথে ৭ ডিগ্রী হেলানো। আর বামন গ্রহ প্লুটোর কক্ষপথ ১৭ ডিগ্রী হেলানো। আমরা দেথেছি, আনবিক মেঘ থেকে প্রটোস্টার হয় এবং সেসময়ে একটি ডিস্ক গঠন করে। শেষ পর্যন্ত ওই ডিস্ক থেকেই গ্রহ-উপগ্রহ গঠন করে। আমাদের সূর্য মেইন সিক্যুয়েন্সে আসার আগে ঐ সকল পর্যায় পাড় হয়েছে। সূর্যেরও গঠন প্রক্রিয়ায় ধূলিকণার ডিস্ক ছিল। ওই ডিস্ক থেকেই গ্রহ-উপগ্রহ গঠিত হয়েছে বিধায় গ্রহগুলোর কক্ষপথ সমূহ একটি ডিস্কের তলেই অবস্থান করে।কাইপার বেল্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কাইপার বেল্টটি আবিস্কার করেন। তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বোক কাইপারের নামানুসারে কাইপার বলয় বা বেল্টের নামকরণ করা হয়েছে। বেল্টটি সৌরগজগতের গ্রহ-উপগ্রহের ক্রান্তিবৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বেল্টটি ধুমকেতু সমৃদ্ধ, তাই বেল্টটিকে ধুমকেতুর ভাণ্ডার বলা হয়। সূর্য থেকে ৩০ অ্যাস্ট্রোনমিক ইউনিট দূরে নেপচুনের কক্ষপথের পরেই বলয়টি শুরু হয় এবং প্লুটোর কক্ষপথ পেড়িয়ে ৫০ অ্যাস্ট্রোনমিক ইউনিট পর্যন্ত বিস্তৃত। কাইপার বেল্টে বড় বড় বস্তু বা অবজেক্ট পাওয়া যায় যাদের কাইপার বেল্ট অবজেক্ট বলে। ১৯৯২ সালে প্রথম কাইপার বেল্ট অবজেক্ট আবিস্কার করা হয় এবং কাইপার বেল্টের অবস্থান সুনিশ্চিত করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১,০০০ তীরও বেশি কাইপার বেল্ট অবজেক্ট আবিস্কার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাইপার বেল্ট অবজেক্টের ব্যাস প্লুটো গ্রহের মত বা তার চেয়েও বেশি। বিশাল কাইপার বেল্ট অবজেক্ট আবিস্কারের পর বুঝা যাচ্ছে যে, প্লুটো কোন গ্রহ নয়, প্লুটো একটি বড় কাইপার বেল্ট অবজেক্ট। এই অবজেক্টগুলো অন্যান্য গ্রহের মত সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিন করে। কাইপার বেল্টের পরেও অনেক বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো-ছিটানো ডিস্ক সদৃস বস্তু আছে, যাদের উদ্ভট কক্ষগুলো তাদেরকে সূর্য থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, স্বল্প মেয়াদী ধুমকেতু, যেমন, বৃহস্পতি পরিবারের ধুমকেতু ও হ্যালির মত ধুমকেতুগুলো কাইপার বেল্টের পরে ওই বিক্ষিপ্ত ডিস্ক অবজেক্ট (বস্তু) থেকে আসে। আর দীর্ঘ মেয়াদী ধুমকেতুগুলো আসে আরোও দূর থেকে, ওট মেঘ (Oort cloud) থেকে। সৌরজগৎ সৃষ্টির সাথেই অবশিষ্ট বস্তু নিয়ে কাইপার বেল্ট গঠিত হয়েছে কিনা তা’ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এগুলো কি সেসময়ে ওই স্থানগুলোতেই গঠিত হয়েছে, নাকি কাইপার বেল্টের অবজেক্টগুলো সৌরজগৎ থেকে ঠেলা দিয়ে বাইরের দিকে বর্তমান অবস্থানে নেয়া হয়েছে, যেমনটি নেপচুন বাইরের দিকে সরে যাচ্ছে। যদি ওগুলো ওই স্থানেই পূর্বে গঠিত হয়ে থাকে তবে এলাকাটি এখন প্রায় খালি হয়ে গেছে, কারণ বিশাল শীতল গ্রহ গঠনের জন্য যে পরিমান ভর লাগে তার মাত্র ১% ভর সমগ্র কাইপার অবজেক্ট মিলিয়ে আছে। ওট ক্লাউডওট ক্লাউড বা ওট মেঘ কি?

প্লুটোর অনেক দূরে কাইপার বেল্টের শেষ প্রান্ত থেকে শুর হয় ওট ক্লাউড বা ওট মেঘ। সৌরজগতের গ্রহগুলো যেমন একটি ডিস্কের উপর উপরে সূর্যকে প্রদক্ষিন করে, ওট ক্লাউডের বেলায় তা’ কিন্তু নয়। ওট ক্লাউডের আকৃতি গোলক বা বলের মত। আরোও পরিস্কার করে বলা যায় অনেকটা বুদবুদের মত। একটি ফুট বলের যেমন আবরণ থাকে চামড়া বা রাবার আর ভিতরে থাকে বাতাস, তেমনি ওট ক্ল্যউড অসংখ্য বস্তুসমষ্টির গোলকাকৃতির আবরণ যার কেন্দ্রে আছে সূর্য, তারপর সৌরপরিবারের গ্রহ-উপগ্রহ ও কাইপার বেল্ট। আরোও পরিস্কার করে যদি বলি, তাহলে, ওট মেঘ একটি বিশাল ঘন বুদবুদ যার কেন্দ্রে আছে সূর্য এবং তারপর আছে গ্রহ-উপগ্রহ ও কাইপার বেল্ট অবজেক্ট। ওট ক্লাঊড হল হাজার হাজার কোটি ধুমকেতুর আবরণ। এগুলোর আকার পর্বতের মত বা তার চেয়েও বড়।ওট ক্লাউড কত দূরে ওট মেঘের ভিতরের প্রান্ত সূর্য থেকে ২,০০০ এবং ৫,০০০ আলোক বর্ষ মধ্যে অবস্থান করে আর বাইরের সীমানা ১০,০০০ এবং ১০০০,০০০ আলোক বর্ষের মধ্যে আছে। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট সময় লাগে এবং নেপচুনের কক্ষে পৌছতে সময় লাগে ৪.৫ ঘন্টা। হিলিওস্ফেয়ারের শেষ প্রান্ত বা শেষ সীমানাই হল হিলিওপজ। হিলিওপজ (Heliopause) হল, সৌরজগতের শেষ সীমানা। সূর্য থেকে সৌরজগতের শেষ প্রান্ত, অর্থাৎ হিলিওপজ পর্যন্ত পৌছতে প্রায় ১৬.৫ ঘন্টা সময় লাগবে। সৌরজগৎ সম্পর্কে নিখুঁতভাবে জানতে নাসা ১৯৭৭ সালে ভয়েজার-১ নামক একটি মহাশূন্যযান মহাশূন্যে প্রেরণ করেছে। ওই মহাশূন্যযানের বর্তমান গতি বেগ দিনে এক মিলিয়ন মাইল। ২০১৩ সালে নাসা ঘোষণা করেছে, মহাশূন্যযান ভয়েজার-১ হিলিওপজ অতিক্রম করেছে। সূর্য থেকে হিলিওপজের দূরত্ব ১৮ বিলিয়ন কিলোমিটার।

লেখকঃ সাবেক অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা।

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন তারেক রহমান

যশোরে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। যশোরের জেলা ও দায়রা জজ শেখ...

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে হটলাইন চালু

নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি আক্রমণাত্মক ভঙ্গি, কটূক্তি, ইভ টিজিং, হেনস্তা ও যৌন হয়রানি বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হটলাইন সেবা চালু...

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতার জন্য জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধন

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতার জন্য জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার সিএইসটি শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ০৪ঠা মার্চ ২০২৫ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ...

মার্ক কার্নি কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। আবার...

Recent Comments