বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম অন্যান্যলালনিরহাট জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ

লালনিরহাট জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ

লালনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালনিরহাট জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসক। ইতোমধ্যে প্রায় ২০১ জনকে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা থেকে ফেরাতে পূর্ণাবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একে-একে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত সবাইকে পূর্ণাবাসন করা হবে। 
২০১৮ সালের নভেম্বর মাস হতে এই জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম পর্যায়ে জেলার ৫টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভার মধ্যে হতে ভিক্ষুক প্রবন দু’টি করে ইউনিয়নকে র্টাগেট করে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলার সিন্দুর্না, তুষভান্ডার, মোগলহাট, ভেলাবাড়ি, বুড়িমারী ইউনিয়নের ২০১ জন ভিক্ষুককে পূর্ণাবাসন করা হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করার হচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তির বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দুঃস্থ এই নর-নারী ও প্রতিবন্ধীদের সরকারি সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকা সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরেও তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দৈনিক আয়ের জন্য রিক্সা-ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, রিক্সা, গবাদিপশু, গরু, ছাগল, খাসি, হাঁস-মুরগি পালন, কারিগরি শিক্ষা, কুটিরশিল্পের কাজ ইত্যাদ্দি করতে সহায়তা করা হয়। মোটকথা প্রতিজন ভিক্ষুককে পূর্ণাবাসনে কমবেশী ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। বেশীরভাগ সময় তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য পণ্য ও গবাদি পশু হাটবাজার হতে ক্রয় করে দেয়া হয়। সেই সাথে তাদের খাদ্য কষ্ট লাঘবে পশু খাদ্যের পাশাপাশি পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়। 
এ পর্যন্ত ২০১ জন ভিক্ষুককে পূর্ণাবাসনে খরচ হয়েছে ৬২ লাখ ৯৮ হাজার ৭ শত টাকা। এখনো প্রায় ২ হাজার ৯৮৪ জন ভিক্ষুক পূর্ণাবাসনের কাজ বাকি রয়েছে। এরমধ্যে অর্থের যোগান করতে না পাওয়ায় ভিক্ষুক মুক্ত করার কাজটি ধীরগতি পেয়েছে। এই প্রকল্পটি চুড়ান্তভাবে সমাপ্ত করতে এখনো প্রায় ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার অর্থ প্রয়োজন। 
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে খরচ হওয়া অর্থের সংগ্রহ হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জেলায় কর্মরত সরকারি বেসরকারি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিবৃন্দের একদিনের বেতনের অর্থ দিয়ে। 
জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের সবচেয়ে অসম্মানজনক পেশা। এই পেশায় মানুষ তার আতœমর্যাদা হারিয়ে ফেলে। এটি অভিশপ্ত পেশা। প্রতিটি ধর্মের ভিক্ষাবৃত্তিকে দৃষ্টিকটুভাবে নিয়েছে। ইসলাম ধর্মে ভিক্ষাবৃত্তিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে সমাজ হতে বিতারিত করতে হলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগও প্রয়োজন। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ইচ্ছে করলে যেকোন ব্যক্তি, যেকোন প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুকমুক্ত প্রকল্পের তহবিলে সহায়তা করতে পারেন। ভিক্ষুকমুক্ত করতে প্রতিটি ইউনিয়নের সহায়তা পাওয়া ভিক্ষুদের মনিটরিং করা হচ্ছে। এদের মনিটরিং করতে দুইজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। করোনাকালীণ বিধিনিষেধ থাকায় কিছুটা মনিটরিংয়ের কাজ শিথিল ছিল। এখন পূর্ণারায় সবকিছু কঠোরভাবে দেখভাল করা হবে।  
উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রপীড়িত জেলা গুলোর অন্যতম লালমনিরহাট জেলা। একযুগ আগে শীত মৌসুমে আশি^ন-কার্তিক মাসে কৃষিশ্রমিকের কাজের অভাব দেখা দিতো। তখন গ্রামে গ্রামে কৃষিশ্রমিকরা বেকার থাকতো। কাজ না থাকায় দিনকাটতো অর্ধাহারে অনাহারে। তখন সাধারণ মানুষ মৌসুমি অভাব বা মঙ্গা বলতো। এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন প্রতিটি গ্রামে মানুষ চাষ পদ্ধতি পাল্টে ফেলেছে। এখন সারাবছর গ্রামে শহরে কাজ রয়েছে। এখন উল্টোচিত্র কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যায়না। এবার সেই মঙ্গা মুক্ত জেলায় ভিক্ষুক মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগকে বাস্তাবয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। ভিক্ষুক সামাজিক ভাবে মর্যাহীন হয়। এই পেশার মানুষকে সমাজে মোটেও ভাল চোখে দেখে না। তাই ভিক্ষাবৃত্তিকে সমাজ হতে বিতারিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খানা জরিপের মাধ্যমে ঘরে ঘরে তথ্য সংগ্রহ করে ভিক্ষুকদের তালিকা তৈরি করা হয়। জেলা প্রশাসকের দপ্তরে রয়েছে ভিক্ষুকদের ডাটাবেজ।

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments