গ্রামীণ কৃষি ডেস্কঃ সূরা ইউনুস (আরবি ভাষায়: سورة يونس) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের দশম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১০৯ টি। এই সূরাটিতে কোরাআন পাক ও ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্যাবলী- তওহীদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি বিষয়ের যথার্থতা বিশ্বচরাচর এবং তার মধ্যকার পরিবর্তন-পরিবর্তনশীল ঘটনাবলীর মাধ্যমে প্রমাণ দেখিয়ে ভালো করে বোধগম্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাথে সাথে কিছু উপদেশমূলক, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং কাহিনীর অবতারণা করে সে সমস্ত লোকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যারা আল্লাহ্ তাআলার এ সব প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহের উপর একটু চিন্তা করে না।
এ প্রাথমিক আলোচনার পর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা সহাকরে সামনে আসেঃ
একঃ যারা অন্ধ বিদ্বেষ ও গোঁড়ামিতে লিপ্ত হয় না এবং আলোচনায় হারজিতের পরিবর্তে নিজেরা ভুল দেখা ও ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বাঁচার চিন্তা করে তাদের বুদ্ধি- বিবেককে আল্লাহর একত্ব ও পরকালীন জীবন সম্পর্কে নিশ্চিন্ত করার মতো যুক্তি প্রমাণাদি।
দুইঃ লোকদের তাওহীদ ও রিসালাতের আকীদা স্বীকার করে নেয়ার পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে যেসব বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল সেগুলো দূর করা এবং যেসব গাফলতি সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া।
তিনঃ মুহম্মাদ (সা) এর রিসালাত এবং তিনি যে বাণী এনেছিলেন সেসব সম্পর্কে যে সন্দেহ ও আপত্তি পেশ করা হতো, তার যথাযথ জবাব দান।
চারঃ পরবর্তী জীবনে যা কিছু ঘটবে সেগুলো আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া, যাতে মানুষ সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে নিজের কার্যকলাপ সংশোধন করে নেয় এবং পরে আর তাকে সে জন্য আফসোস করতে না হয়।
পাঁচঃ এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া যে, এ দুনিয়ার বর্তমান জীবন আসলে একটি পরীক্ষার জীবন। এ পরীক্ষার জন্য তোমাদের যে অবকাশ দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র ততটুকুই যতটুকু সময় তোমরা এ দুনিয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছো । এ সময়টুকু যদি তোমরা নষ্ট করে দাও এবং নবীর হেদায়াত গ্রহণ করে পরীক্ষায় সাফল্য লাভের ব্যবস্থা না করো, তাহলে তোমরা আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ পাবে না। এ নবীর আগমন এবং এ কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে সত্য জ্ঞান পৌছে যাওয়া তোমাদের পাওয়া একমাত্র ও সর্বোত্তম সুযোগ। একে কাজে লাগাতে না পারলে পরবর্তী জীবনে তোমাদের চিরকাল পস্তাতে হবে।
ছয়ঃ এমন সব সুষ্পষ্ট অজ্ঞতা, মূর্খতা, ও বিভ্রান্তি চিহ্নিত করা, যা শুধুমাত্র আল্লাহর হেদায়াত ছাড়া জীবন যাপন করার কারণেই লোকদের জীবনে সৃষ্টি হচ্ছিল।
সবশেষে ঘোষণা করা হয়েছেঃ
এ আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী এবং এ পথ ও নীতির ভিত্তিতে এগিয়ে চলার জন্য আল্লাহ তার নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে সামান্যতমও কাটছাট করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তি এটা গ্রহণ করবে সে নিজের ভাল করবে এবং যে একে বর্জন করে ভূল পথে পা বাড়াবে সে নিজেরই ক্ষতি করবে। এখানে এ সংক্রান্ত কিছু আয়াত উপস্থাপন করা হলো।
“আলিফ লা-ম রা। এ হল বিজ্ঞানময় গ্রন্থের আয়াত।”
[আয়াতঃ ০১]”তোমাদের রব তো আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন(১), তারপর তিনি আরশের উপর উঠলেন(২)। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন।(৩) তার অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই(৪)। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; কাজেই তোমরা তারই ইবাদাত কর(৫)। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?”
[আয়াতঃ০৩]”তিনিই সূর্যকে দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোকময় করেছেন এবং তার জন্য মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এগুলোকে যথাযথ ভাবেই সৃষ্টি করেছেন।তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।★নিশ্চয় দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনে যা সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।”
[আয়াতঃ০৫-০৬]”নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে পথ নির্দেশ করবেন; নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে তাদের পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।★সেখানে তাদের বাক্য হবে, ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ (হে আল্লাহ! তুমি মহান পবিত্র)! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম। আর তাদের শেষ বাক্য হবে, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।
[আয়াতঃ০৯-১০]”আর যখন আমি আস্বাদন করাই স্বীয় রহমত সে কষ্টের পর, যা তাদের ভোগ করতে হয়েছিল, তখনই তারা আমার শক্তিমত্তার মাঝে নানা রকম ছলনা তৈরী করতে আরম্ভ করবে। আপনি বলে দিন, আল্লাহ সবচেয়ে দ্রুত কলা-কৌশল তৈরী করতে পারেন। নিশ্চয়ই আমাদের ফেরেশতারা লিখে রাখে তোমাদের ছল-চাতুরী।★★তারপর যখন তাদেরকে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলেন, তখনই তারা পৃথিবীতে অনাচার করতে লাগল অন্যায় ভাবে। হে মানুষ! শোন, তোমাদের অনাচার তোমাদেরই উপর পড়বে। পার্থিব জীবনের সুফল ভোগ করে নাও-অতঃপর আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি বাতলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে।”
[আয়াতঃ ২১ ও ২৩]”আর আল্লাহ শান্তি-নিরাপত্তার আলয়ের প্রতি আহবান জানান এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথ প্রদর্শন করেন।★যারা সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং তারও চেয়ে বেশী। আর তাদের মুখমন্ডলকে আবৃত করবে না মলিনতা কিংবা অপমান। তারাই হল জান্নাতবাসী, এতেই তারা বসবাস করতে থাকবে অনন্তকাল।★আর যারা সঞ্চয় করেছে অকল্যাণ অসৎ কর্মের বদলায় সে পরিমাণ অপমান তাদের চেহারাকে আবৃত করে ফেলবে। কেউ নেই তাদেরকে বাঁচাতে পারে আল্লাহর হাত থেকে। তাদের মুখমন্ডল যেন ঢেকে দেয়া হয়েছে আধাঁর রাতের টুকরো দিয়ে। এরা হল দোযখবাসী। এরা এতেই থাকবে অনন্তকাল।”
[আয়াতঃ ২৫-২৬]’আর কোরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহ নেই-তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে।”[আয়াতঃ ৩৭]”আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোরআনকে বিশ্বাস করবে এবং কেউ কেউ বিশ্বাস করবে না। বস্তুতঃ তোমার পরওয়ারদেগার যথার্থই জানেন দুরাচারদিগকে।★আর যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে বল, আমার জন্য আমার কর্ম, আর তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদের দায়-দায়িত্ব নেই আমার কর্মের উপর এবং আমারও দায়-দায়িত্ব নেই তোমরা যা কর সেজন্য।”
[আয়াতঃ ৪০-৪১]”আল্লাহ জুলুম করেন না মানুষের উপর, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে।”
[আয়াতঃ ৪৪]”শুনে রাখ, যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে ও যমীনে সবই আল্লাহর। শুনে রাখ, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। তবে অনেকেই জানে না। তিনিই জীবন ও মরণ দান করেন এবং তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।★হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।★বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ।”
[আয়াতঃ ৫৫-৫৮]”বল, আচ্ছা নিজেই লক্ষ্য করে দেখ, যা কিছু আল্লাহ তোমাদের জন্য রিযিক হিসাবে অবতীর্ণ করেছেন, তোমরা সেগুলোর মধ্য থেকে কোনটাকে হারাম আর কোনটাকে হালাল সাব্যস্ত করেছ? বল, তোমাদের কি আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, নাকি আল্লাহর উপর অপবাদ আরোপ করছ?★আর আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপকারীদের কি ধারণা কেয়ামত সম্পর্কে? আল্লাহ তো মানুষের প্রতি অনুগ্রহই করেন, কিন্তু অনেকেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।★বস্তুতঃ যে কোন অবস্থাতেই তুমি থাক এবং কোরআনের যে কোন অংশ থেকেই পাঠ করা কিংবা যে কোন কাজই তোমরা কর অথচ আমি তোমাদের নিকটে উপস্থিত থাকি যখন তোমরা তাতে আত্ননিয়োগ কর। আর তোমার পরওয়ারদেগার থেকে গোপন থাকে না একটি কনাও, না যমীনের এবং না আসমানের। না এর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছু আছে, না বড় যা এই প্রকৃষ্ট কিতাবে নেই।★মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।★যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে।★তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।★আর তাদের কথায় দুঃখ নিয়ো না। আসলে সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর। তিনিই শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।”
[আয়াতঃ৫৯-৬৪]’এবং তাদের অন্তর্ভুক্তও হয়ো না যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আল্লাহর বাণীকে। তাহলে তুমিও অকল্যাণে পতিত হয়ে যাবে।★যাদের ব্যাপারে তোমার পরওয়ারদেগারের সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়ে গেছে তারা ঈমান আনবে না।”
[আয়াতঃ ৯৫-৯৬]”আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতে সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য?★আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর।”
[আয়াতঃ ৯৯-১০০]”বলে দাও-হে মানবকুল, তোমরা যদি আমার দ্বীনের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে থাক, তবে (জেনো) আমি তাদের এবাদত করি না যাদের এবাদত তোমরা কর আল্লাহ ব্যতীত। কিন্তু আমি এবাদত করি আল্লাহ ত’য়ালার, যিনি তুলে নেন তোমাদেরকে। আর আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে যাতে আমি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত থাকি।★আর যেন সোজা দ্বীনের প্রতি মুখ করি সরল হয়ে এবং যেন মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত না হই।★আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।★আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোন কষ্ট আরোপ করেন তাহলে কেউ নেই তা খন্ডাবার মত তাঁকে ছাড়া। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার মেহেরবানীকে রহিত করার মতও কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন; বস্তুত; তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু।★বলে দাও, হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে। এমন যে কেউ পথে আসে সেপথ প্রাপ্ত হয় স্বীয় মঙ্গলের জন্য। আর যে বিভ্রান্ত ঘুরতে থাকে, সে স্বীয় অমঙ্গলের জন্য বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকবে। অনন্তর আমি তোমাদের উপর অধিকারী নই।★আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুতঃ তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।”[আয়াতঃ ১০৪-১০৯]
