মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম কৃষিকৃষকের রবি মৌসুম

কৃষকের রবি মৌসুম

সরকার মো. আবুল কালাম আজাদ 

বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় রবি মৌসুম (অক্টোবর–মার্চ) একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বর্ষা-পরবর্তী এই মৌসুমে আবহাওয়া থাকে শুষ্ক, তাপমাত্রা মাঝারি (১৫–২৫°সে) এবং সূর্যালোক পর্যাপ্ত—যা অধিকাংশ উচ্চফলনশীল ফসলের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

🔸 মৌসুমের সময়কাল ও বৈশিষ্ট্য—-

সময়কাল : অক্টোবর–মার্চ

প্রকৃতি : শুষ্ক ও ঠান্ডা মৌসুম

বৃষ্টিপাত : অল্প বা প্রায় অনুপস্থিত

সেচ নির্ভরতা : উচ্চমাত্রায়

উপযোগী অঞ্চল : দেশের প্রায় সব কৃষি অঞ্চল

🔸 রবি মৌসুমের প্রধান প্রধান ফসল—-

এই মৌসুমে বাংলাদেশের কৃষকরা বহুবিধ ফসল চাষ করে থাকেন, যেমন—
বোরো ধান, গম, আলু, সরিষা, মসুর, খেসারি, পেঁয়াজ, রসুন ও বিভিন্ন শাকসবজি (বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, লাউ ইত্যাদি)।
এর মধ্যে বোরো ধান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফসল, যা দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৬০ ভাগ অবদান রাখে।

🔶 কৃষি-প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব—

আবহাওয়ার অনুকূলতা ও সেচ ব্যবস্থাপনা:
রবি মৌসুমে বৃষ্টিপাত সীমিত থাকায় সেচ নিয়ন্ত্রিতভাবে দেওয়া যায়, যা উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।

ফসল বৈচিত্র্য ও মাটির উর্বরতা: ধান–গম–ডাল–তেলবীজ পর্যায়ক্রমিক চাষ (Crop Rotation) মাটির পুষ্টি ভারসাম্য বজায় রাখে।

খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি:
বোরো ধান জাতীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে, আর ডাল ও সবজি জাতীয় ফসল জনগণের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক।

অর্থনৈতিক অবদান:
রবি মৌসুমের ফসলের বাজারমূল্য তুলনামূলক বেশি, ফলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতা নিশ্চিত হয়।

🔶 কৃষকের করণীয় দিক

রবি মৌসুমের সফল ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের কিছু করণীয় পদক্ষেপ অনুসরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় —

মাটি পরীক্ষা ও জমি প্রস্তুতি:
আগাম মাটি পরীক্ষা করে পিএইচ মান অনুযায়ী সার প্রয়োগ ও জমি গভীরভাবে চাষ করা।

উন্নত ও উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন:
স্থানীয় পরিবেশ ও পানির সহজলভ্যতা বিবেচনা করে বোরো, গম ও তেলবীজের উপযোগী জাত নির্বাচন।

সময়সূচিত বপন ও রোপণ:
নির্ধারিত সময়ে চারা রোপণ করলে ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন উভয়ই বাড়ে।

সেচ ও সার ব্যবস্থাপনা:
আধুনিক সেচ প্রযুক্তি (Alternate Wetting and Drying) ব্যবহার এবং জৈব ও রাসায়নিক সার সুষমভাবে প্রয়োগ।

রোগ-পোকার দমন:
আইপিএম (Integrated Pest Management) পদ্ধতি অনুসরণ করে রোগ-পোকার আক্রমণ কমানো।

ফসল পর্যায় পরিবর্তন:
একই জমিতে একজাতীয় ফসল বারবার না চাষ করে বৈচিত্র্য বজায় রাখা।

সংরক্ষণ ও বিপণন:
উৎপাদিত ফসল যথাযথভাবে শুকিয়ে ও সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা।

রবি মৌসুম বাংলাদেশের কৃষির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি ভারসাম্যের মূলভিত্তি। কৃষকরা যদি সময়োপযোগী প্রযুক্তি, সঠিক জাত নির্বাচন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তবে রবি মৌসুম বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে আরও বৃহৎ সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করবে।

লেখকঃ কেন্দ্রীয় সভাপতি - বাংলাদেশ পেশাজীবী ফেডারেশন
কৃষি লেখক ও কথক - বাংলাদেশ বেতার
উপদেষ্টা - দৈনিক গ্রামীণ কৃষি, সংবাদ প্রতিক্ষণ,
সাধারণ সম্পাদক - আমরা পল্লবী বাসী

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments