রকি প্রেম সরকারঃ শেখ মোহাম্মদ সুলতান, যিনি এস এম সুলতান নামে পরিচিত ৷ তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী ৷ বাঙালির চিত্রশিল্পের একজন কিংবদন্তি কারিগর তিনি ৷ এছাড়াও তিনি ছিলেন সুরসাধক, বাঁশিবাদক, চিত্রশিল্পী হিসেবে এশিয়ার অন্যতম ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ৷ কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ই আগস্ট, নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ৷
তাঁর জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে । আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তাঁর শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে । তাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে । তাঁর ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ‘এশিয়ার ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে ঘোষণা করেন ৷
সুলতানের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র সহ দেশে-বিদেশে তার বহু একক চিত্র প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে ৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তার ১৭টি একক প্রদর্শনী হয়েছিলো ৷ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো এবং বোস্টনে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয় । এরপর লন্ডনেএ তিনি তাঁর অঙ্কিত চিত্রগুলো প্রদর্শনী করেছিলেন । ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে, হ্যামস্টিড, লন্ডন, যুক্তরাজ্যে, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, জন ব্রাক , পল ক্লী , জন মার্টিন প্রমুখদের সাথে তাঁর বিখ্যাত চিত্রগুলোর যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ৷
সুলতান নড়াইলের কৈলাসটিলা জমিদারবাড়িটি পরিষ্কার করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নন্দনকানন প্রাইমারি স্কুল ‘এবং ‘নন্দনকানন ফাইন আর্টস স্কুল ‘ (যা পরে পরিণত হয় ‘চাচুঁড়ি পুরুলিয়া হাইস্কুল’) প্রশাসনের সহায়তায় স্কুল চলতে থাকে কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় ছবি আঁকার ক্লাস । সুলতান দুঃখ পেয়ে আবার নড়াইলে চলে আসেন । এবার এসে তিনি শিশু শিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন যা নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিলো । শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে “শিশুস্বর্গ” এবং যশোরে “চারুপীঠ” নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় তুলেছিলেন।
তিনি ১৯৮০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান’র কাছ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার গ্রহণ করেন ৷ তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কে ‘ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন’ কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ৷ এছাড়াও ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী’তে আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত হোন ৷ চারুকলায় অসামান্য অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি ৷
গ্রামীণ কৃষি/ ইকবাল
