শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -

সূর্যের পরিনতি

অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর

মেইন সিক্যুয়েনসের নক্ষত্র হল, যার কেন্দ্রে বা কোরে হাইড্রোজেন পুড়ে (ফিউজ হয়ে) হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয় এবং এই নিউক্লিয়ার ফিউশনে কোর থেকে বাইরের দিকে প্রচুর শক্তি বের করে দেয়। ফলে কোর থেকে বাইরের দিকে একটা চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ভিতরের কোরের মাধ্যকর্ষণ শক্তি ভিতরের কেন্দ্রের দিকে টান সৃষ্টি করে। মেইন সিক্যুয়েনসের নক্ষত্রগুলো ওই ভিতরের দিকের ও বাইরের দিকের দুই উল্টামুখি চাপকে ব্যালান্স বা ভারসাম্য রক্ষা করে জ্বলতে থাকে। আমাদের সূর্য হল তেমন একটি মেইন সিক্যুয়েনসের নক্ষত্র, যার কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ফিউশন হচ্ছে। সূর্যের জীবনকাল স্থিতিশীল এবং দীর্ঘায়িত। আসলে মেইন সিক্যুয়েনসের নক্ষত্রগুলো অনেকটাই স্থিতিশীল এবং লম্বা জীবন, প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর। নিউক্লিয়ার ফিউশন এমন হারে শক্তি উৎপাদন করে যে, যা খুব বেশিও না, আবার খুব কমও না। এই উৎপাদিত শক্তির বাইবের দিকের ধাক্কাকে ব্যালান্‌স করে কোরের মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তির কেন্দ্রমুখি টান। দশ বিলিয়ন বছর পরে যখন কোরের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে তখন স্থিতিশীল নক্ষত্রের জীবনকালও শেষ হয়ে যাবে। আর তখনই শুরু হবে রূপান্তর প্রক্রিয়া।নিউক্লিয়ার ফিউশনে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে রূপান্ত্রিত হয়। নাক্ষত্রিয় কোরে বর্তমানে হিলিয়ামই প্রাধান্য বিস্তার করছে। নক্ষত্র কোরের তাপমাত্রা ১০ কোটি সেঃগ্রেঃ বা তার উপরে থাকলে একটি প্রক্রিয়ার (যাকে ট্রিপ্‌ল আলফা প্রুসেস বলে) মাধ্যমে হিলিয়াম ভারী ভারী পরমামণুতে রূপান্তরিত হয়। এমন উচ্চ তাপমাত্রা হাইড্রোজেন ফিউশনে দরকার হয় না। আর এত বেশি তাপ মেইন সিক্যুয়েন্‌সের নক্ষত্রের শেষের দিকে থাকেও না। ফলে নক্ষত্রের কোরে হিলিয়াম ভারী পরমাণুতের রূপান্তর জন্য যে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন তার সরবরাহ পায় না। তাই কোরের ফিউশন বন্ধ হয়ে যায়। এমনটি আমাদের সূর্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যাহোক, কোরের ফিউশন বন্ধ হলেও নক্ষত্রের কোরের বাইরের খোলশে (shell) হাইড্রোজেন ফিউশন (হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়ামে রূপান্তর) অব্যহত থাকে।

এই বাইরের ফিউশন প্রক্রিয়ার উৎপাদিত শক্তি নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বাইরের শেলের হাইড্রোজেন থেকে রূপান্তরিত হিলিয়াম জড় কোরের নিকটে জমা হতে থাকে। ফলে, কোরের ভর বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু কোর তো কালাকাল ধরে বড় হতে পারে না। যখন ওই কোরের ভর সম্পূর্ণ নাক্ষত্রিয় ভরের ১০% হয় তখন তাকে চন্দ্রশেখর লিমিট বলে। চন্দ্রশেখর লিমিটের বেশি ভর হলেই কোরে ধস নামা শুরু হয়। অর্থাৎ, কোর সঙ্কুচিত হতে থাকে। সঙ্কোচনের সাথে সাথে কোর মাধ্যাকর্ষণের বিভব শক্তি (potential energy) মুক্ত করে দেয় বা ছেড়ে দেয়। ফলে, কোরের চারপাশের হাইড্রোজেন শেলের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে নিউক্লিয়ার ফিউশনের দক্ষতা বেড়ে যায়। কালক্রমে, হাইড্রোজেন শেলে যেখানে নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটে সেটা প্রসারিত হতে থাকে। প্রসারণের ফলে হাইড্রোজেন শেল পাতলা থেকে পাতলা হতে থাকে। নাক্ষত্রিক ব্যাসার্ধ বড় হয়, তাই নক্ষত্র বা সূর্যের ফটোস্ফেয়ারের তাপমাত্রা কমে আসে। এর ফলে নক্ষত্রের বাইরের স্তরে পরিচলন (convection) প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাপের সঞ্চালন পরিচলনের মাধ্যমে সংঘোটিত হয়।নিউক্লিয়ার ফিউশনের ভিত্তিই হল কার্বন-নাইট্রোজেন-অক্সিজেন চক্র বা সাইকল (CNO cycle)। আর এই চক্রটি অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। কার্বন-নাইট্রোজেন-অক্সিজেন চক্রে (cycle), কার্বন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় শুধুমাত্র অনুঘট হিসেবে কাজ করে। এই নিউক্লিয়ার ফিউশনে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রুপান্তরিত হয়, আর একই সাথে নিউট্রিনো ও গামা ফোটন বিকিরণের মাধ্যমে প্রচুর শক্তি বের করে দেয়। একটি তাপমাত্রার রাসায়নিক বিক্রিয়া নিম্নে দেয়া হলঃ12C + 1H → 13N + gamma ray 13N → 13C + e++ Mega electron volt13C + 1H → 14N + gamma ray14N + 1H → 15O + gamma ray15O → 15N + e++ Mega electron volt15N + 1H → 12C + 4He(কপি করার সময় সিম্বল আসে নাই, আবার সংখ্যাগুলোবর্ণের উপরে যাবে)(নিউট্রিনো হল, একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা যার কোন বৈদ্যুতিক চার্জ নেই। কণাটি এত ক্ষুদ্র যে, তার ভর প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। যেহেতু বস্তু বা পদার্থের এই কণার সম্পৃক্ততা অতি সামান্য, তাই মহাবিশ্বে প্রচুর পরিমানে নিউট্রিনো আছে। এই কণাগুলোকে সনাক্ত করা বা খোঁজ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।)।(সংগৃহিত ও সঙ্কোলিত। সৌজন্যেঃ উইকিমিডিয়া ও মিশেল ডিওডাটি)।(সংযোজিত দুইটি চিত্র দেখুন)

লেখকঃ সাবেক অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা।

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments