অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর
সুপারনোভা অত্যন্ত শক্তিশালী ও আলোকিত নক্ষত্রিয় বিস্ফোরণ। বিশাল তারকা হঠাৎ প্রচন্ড শক্তি ও তীব্র আলোক বিকিরণ করে নিষ্প্রভ হয়ে যায়। আর এমন ঘটনা ঘটে একটি বিশাল তারার ক্রমবিকাশের সর্বশেষ প্রক্রিয়ায়, অথবা একটি শ্বেত বামন তারার নিওক্লিয়ার ফিউশনে ট্রিগার করার পর। কোন তারার কেদ্রে বা কোরে যদি কোন পরিবর্তন হয় তখনই এমন ঘটনা ঘটে। কার্বন-অক্সিজেনের কোন শ্বেত বামন তারা তার পার্শের সঙ্গী তারা থেকে পদার্থ নিয়ে জমা করতে করতে এমন এক পর্যায়ে আসে যে তার কেন্দ্রে পরিমানের চেয়ে অধিক পরিমানে পদার্থ জমা হয়, ফলে বিস্ফোরিত হয়। একেই সুপারনোভা বলে। আর এক ধরণের সুপারনোভা হয় যখন কোন তারার মৃত্যু হয়।
এমন তারার ভর আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। বিশাল নক্ষত্র তার কেন্দ্রে প্রচুর পরিমানে পারমানবিক জ্বালানি পুড়ানোর ফলে কোরে বা কেন্দ্রে অত্যধিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই, হঠাৎ করে দুর্দান্ত ঠুং ঠুং মহাশব্দে বিশাল তারাটি বিস্ফোরিত হয়। সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে তারার বাইরের স্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে বাইরে নির্গমন করে এবং কোর বা কেন্দ্র সঙ্কুচিত হতে থাকে। বাইরে উড়ে যাওয়া নির্গমিত পদার্থ কণাগুলো জড়ো হয়ে আবার কোন নূতন তারার জন্ম দেয়। আর বিস্ফোরিত তারা যদি আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক বড় হয় তবে কেন্দ্রের ভারী পদার্থ কণাগুলো সঙ্কুচিত হতে হতে ব্লাকহোল (কৃষ্ণ গহবর) তৈরী করে। শ্বেত বামন তারা ও কাল বামন তারা তারার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যায়ে যে পরিমান ভর দিয়ে সুপারনোভার বিস্ফোরণ ঘটে তারার কেন্দ্রে যদি সেই পরিমানে ভর না থাকে তাহলে সুপারনোভার বিস্ফোরণ ঘটবে না। বাইরের স্তরের ধূলিকণার পদার্থ বাইরে নির্গমিত হয়ে যাবে।
কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের জ্বালানি সামান্য সময় পুড়বে যা সাদা দেখাবে। তাই তাকে শ্বেত বামন তারা বলে। ক্রমেই জ্বালানি শেষ হয়ে তারা নিঃষ্প্রোভ হয়ে যাবে। আর আলো বিকিরণ করবে না। অন্ধকার হয়ে যাবে। দেখা যাবে না। তাকে কাল বামন তারা বলে। মাধ্যকর্ষণের কারণে দ্রুত কেন্দ্র সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। শেষ পর্যায়ে নিওট্রন স্টার বা ব্লাকহোল তৈরী করবে।মহাবিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ নক্ষত্রই (আমাদের সূর্যসহ) মেইন সিক্যুয়েন্সের তারা। মেইন সিক্যুয়েন্স বা প্রধান অনুক্রমে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটার জন্য যে পরিমান ভর থাকা দরকার সে পরিমান ভর না থাকলে তারাটি শ্বেতবামন তারায় রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ তারাটির সকল জ্বালানি হাইড্রোজেন ও হিলিয়ার পুড়ে নিঃশেষ হয়ে তারাটির মৃত্যু হয়। যখন তারাটি আর কোন তাপ বা আলো বিকিরণ করে না তখন শ্বেতবামন তারা কালোবামন তারায় রূপান্তরিত হয়। কালোবামন তারা দেখা একেবারেই অসম্ভব।
. আমাদের সূর্যের চেয়ে ০.০৮ কম ভর সম্পন্ন বস্তু কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিউশনে যেতে পারে না। সেগুলোকে বাদামী বামন তারা বলে যারা কোনদিনও জ্বলে না। এবার একটু দেখি কীভাবে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের রিয়্যাক্শন হয় এবং কি পরিমান এনার্জি ছেড়ে দেয়ঃ হাইড্রোজেন + হাইড্রোজেন + হাইড্রোজেন + হাইড্রোজেন = হিলিয়াম + ২৬.৭ MeV। চারটি হাইড্রোজেন ফিউজ হয়ে একটি হিলিয়ামের পরমানু তৈরী করে, আর ২৬.৯ মেগা ইলেক্ট্রন ভোল্ট এনার্জি রিলিজ (মুক্ত) করে দেয় (১ MeV = ১,০০০,০০০ eV; ১ মিলিইলেক্ট্রন ভোল্ট-= ০.০০১ eV । নিউট্রন স্টার নিউট্রন তারা হল, একটি নাক্ষত্রিয় বস্তু যার ব্যাসার্ধ মাত্র ৩০ কিলোমিটার, কিন্তু তার ঘনুত্ব অত্যন্ত বেশি। নিউট্রন তারায় নিউট্রনগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট থাকে। কোন বিশাল তারকার সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে অবশিষ্ট বস্তু বা পদার্থ মাধ্যাকর্ষণের শক্তিতে জমা হয় এবং নিউট্রন তারা গঠন করে। সেক্ষত্রে তারাগুলো ব্লাকহোল তৈরী করার মত তত বিশাল হয় না। মেইন সিক্যুয়েন্সের (প্রধান অনুক্রম) তারা যাদের ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৮ গুণেরও বেশি সেগুলো নিউট্রন স্টারে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু ওই তারাগুলো মেইন সিক্যুয়েন্সের (প্রধান অনুক্রম) থেকে দূরে বিবর্তিত হয় বা সরে আসে তাই তাদের পারমানবিক জ্বালানি লোহা সমৃদ্ধ কোর বা কেন্দ্র তৈরী করে। অর্থাৎ কেন্দ্রে লোহা বা আইরণের পরিমান বৃদ্ধি পায়। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, যখন জ্বালানি পুড়তে থাকে তখন ভিতর থেকে (কোর থেকে) বাইরের দিকে একটা চাপ দিতে থাকে। যখন জ্বালানি পুড়ে একেবারেই শষ হয়ে যায়, তখন আর বাইরের দিকে চাপ থাকে না। কেন্দ্র বা কোর শুধুই অবক্ষয়ের চাপ পেতে থাকে। অর্থাৎ, সকল কণার চাপ কেন্দ্রমুখি হয়। ফলে, সকল কণা কেন্দ্রের দিকে ঠাসাঠাসি করে জমাট বাঁধতে থাকে। কেন্দ্র অস্বাভাবিকভাবে সঙ্কুচিত হতে থাকে।তারপরও বাইরের পুড়ে যাওয়া কণাগুলো কেন্দ্রে জমা হয়ে চন্দ্রশেখর লিমিটকে অতিক্রম করে এবং ইলেক্ট্রন অবক্ষয় চাপ মাধ্যাকর্ষণের চাপকে প্রতিরোধ করার মত যথেষ্ট থাকে না। ফলে, কোর আরোও সঙ্কুচিত পড়ে, আর তাপমাত্রা উঠে পড়ে ৫,০০০,০০০,০০০ কেল্ভিন। (বলে রাখা দরকার, চন্দ্রশেখর লিমিট হল, একটা শ্বেত বামন তারার ভর, যার পরিমান ১.৪৪ সূর্যের ভরের সমান। যখন এই ভর কোন তারকা অতিক্রম করে, তখন সে হয় নিউট্রন স্টার অথবা ব্লাক হোলে রূপান্তরিত হয়)। এমন উচ্চ তাপমাত্রায় ফটোডিসিন্টিগ্রেশন হয়। এর অর্থ হল, উচ্চ শক্তির গামা রশ্মি লোহার (আইরণের) নিউক্লিয়কে ভেঙ্গে ফেলে। এরপর তাপমাত্রা যখন আরোও বেড়ে যায়, ইলেক্টন ক্যাপচারের মাধ্যমে ইলেক্ট্রন ও প্রোটন মিলে নিউট্রন তৈরী করে আর মুক্ত করে দেয় নিউট্রিনোসের বন্যা।
নিউট্রিনো হল, সাব-পারমানবিক কণা, যার ভর প্রায় শূন্যের কাছাকছি এবং সাধারণ বস্তুকণার সাথে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তিন ধরণের নিউট্রিনোস আছে, যথা, ইলেক্ট্রন, মিও ও তাও। যাহোক, নিউক্লিয়ার ঘনত্ব যখন প্রতি ঘনমিটারে ৪ x ১০১৭ কেজি, তখন শক্তিশালি বিকর্ষণ ও অবক্ষয় চাপ উভয়ে মিলে সঙ্কোচনকে থামিয়ে দেয় এবং বাইরের কণার পতনকেও থামিয়ে দেয়। নিউট্রন তৈরীর সময়ে সৃষ্ট নিউট্রিনোসের প্রবাহ ওই কণাগুলোকে বাইরে নিক্ষিপ্ত করে দেয়। তখনই হয় সুপারনোভার বিস্ফোরণ। যা’কিছু অবশিষ্ট থাকে তা’ দিয়ে নিউট্রন তারা গঠিত হয়। যদি অবশিষ্ট ভরের পরিমান সূর্যের ভরের চেয়ে তিন গুণ বেশি হয় তবে ওগুলো সঙ্কুচিত হয়ে জমে ব্লাকহোল গঠন করবে। আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সিতে প্রায় এক শতকোটি নিউট্রন তারা আছে। নিউট্রন স্টার ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশাল আকারের তারার সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে তার কোর বা কেন্দ্র জমাট বেঁধে নিউট্রন তারা গঠিত হয়। নিউট্রন তারার গড় ব্যাস ৬.২ মাইল, আর গড় ভরের পরিমান সূর্যের চেয়ে ১.৪ গুণ বেশি। নিউট্রন তারাপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬০০,০০০ কেলভিন। কেন নিউট্রন স্টার নিয়ে আমার এত আগ্রহ? নিউট্রন স্টার আমার কাছে মহাবিস্ময়। এর কারণ হল, মহাবিশ্বের বিশাল বস্তু, যেমন সুপারনোভার পরে একটি তারার ভগ্নাংশ অতি ছোট্ট একটি বস্তুতে রূপান্তরিত হয় যার ভর থাকে অস্বাভাবিক বেশি। ধরুন, আমাদের পৃথিবী যদি নিউট্রন স্টারে রূপান্তরিত হয় তবে তার সকল ভর নিয়ে আকার হবে একটি ফুটবলের মত। তের মাইল লম্বা নিউট্রন স্টারের ভর প্রায় সূর্যের ভরের চেয়ে দেড়্গুণ বেশি। মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে যখন কোন বস্তু নিউট্রন স্টারে রূপান্তরিত হয়, তখন সে নিউট্রিনোস হিসেবে যে পরিমান শক্তি বের করে দেয় তার পরিমান মহাবিশের দৃশ্যমান সকল তারা আলোর পরিমানের সমান একটি সাধারণ বস্তুতে যে পরিমান প্রোটন থাকে তার সম পরিমান নিউট্রন থাকে। কিন্তু নিউট্রন স্টারের ক্ষেত্রে প্রায় সকল প্রোটন নিউট্রনে রূপান্তরিত হয়। নিউট্রন স্টার প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ নিউট্রন দ্বারা গঠিত। আর যখন প্রোটন নিউট্রনে রূপান্তরিত হয় তখন সর্বব্যাপী এক ধরণের কণা মুক্ত বা ছড়িয়ে দেয় যার নাম নিউট্রিনো। সুপারনোভার বিস্ফোরণের পরে বিশাল নিউট্রিনো সমুদ্র (কারখানা) থেকে নিউট্রন স্টার গঠন করে। একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণে যে পরিমান নিউট্রিনোর বিকিরণ হয় তার পরিমান সূর্যের যে পরিমান কণা থাকে, যেমন, ইলেক্টন, প্রোটন এবং নিউট্রন, তার চেয়ে ১০ গুণের বেশি। এভাবে জল্পনা-কল্পনা যায় যে, নিঊট্রন স্টারে যদি কোন প্রাণী থাকত, তবে সে প্রাণী দ্বিমাত্রিক (two-dimensional) হত। মহাবিশ্বের নিউট্রন স্টারের মাধ্যাকর্ষণ ও চৌম্বক ক্ষেত্র সবচেয়ে শক্তিশালী। নিউট্রন স্টারের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এত শক্তিশালী যে, তারাপৃষ্ঠের সবকিছু সমতল থাকে। নিউট্রন তারার চৌম্বক শক্তি পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির চেয়ে শতকোটি গুণ বা লক্ষ লক্ষ কোটিগুণ বেশি। স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেম্স লাটিমার বলেন, নিউট্রন স্টারের বিষয়ে সবকিছুই চরম, হাস্যকর। নিউট্রন স্টারের ঘনত্ব এতই বেশি যে, নিউট্রন তারকারা শক্তিশালী বলের জন্য নিখুঁত টেস্টবেড সরবরাহ করে। অনেকেই ধারণা করেন, নিউট্রন স্টারের কোর নিউট্রন ও প্রোটনকে সঙ্কুচিত করে কোয়ার্ক ও গ্লুয়নকে মুক্ত করে দেয়। তারপর কোয়ার্ক ও গ্লুয়ন উভয়ে মিলে নিউট্রন স্টার গঠন করে। অবিশ্বাস্য ঘনত্ব ও মাধ্যাকর্ষণ সত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে নিউট্রন স্টার তার ভিতরের কাঠামো বজায় রাখে, যেমন, আবাসন ত্বক, সমুদ্র, বায়ুমন্ডল ইত্যাদি। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল যেমন ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে শত শত মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত, নিউট্রন স্টারের বেলায় তা’ কিন্তু নয়। নিউট্রন স্টারের বায়ু মন্ডল তার পৃষ্ঠ থেকে এক ফুটেরও কম উচ্চতায় বিস্তৃত। বিজ্ঞানীরা যতটুকু জানেন, তাঁদের মতে, নিউট্রন স্টারের ঘূর্ণন সবচেয়ে বেশি, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭০০ বার। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যত নিউট্রন স্টার আছে সেগুলো পালসারের মত কাজ করে। পালসার হল, ঘূর্ণনশীল নিউট্রন স্টার যা’ রেডিও তরঙ্গের মত রশ্মিবিচ্ছুরণ করে। যদি ওই আলোর মরীচি (beams) আমাদের গ্রহের দিকে আসে, তাহলে হঠাৎ করেই পরিস্কার দেখা যায়, অনেকটা লাইট হাঊজের আলো যেমন দেখা যায়। নিউট্রন স্টারের অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র দুই মেরু থেকে ওই রকম রশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটাতে থাকে। ১৯৬৭ সালে জোসিলিন বেল এরকম একটি রেডিও স্পন্দন লক্ষ্য করেছিলেন যা’ আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে আসে। কোন ভুল নিউট্রন তারা পৃথিবীতে সর্বনাশ ঘটাতে পারে। নিউট্রন তারার অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ ও চৌম্বক ক্ষেত্র ভয়ঙ্কর বিপদজনক। যদি কোন নিউট্রন তারা আমাদের সৌরজগতে ঢুকে পড়ে তাহলে অসম্ভব বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। প্রথমেই গ্রহ-উপগ্রহের কক্ষপথকে ছুড়ে ফেলে দিবে। যদি আরোও কাছে আসে, তবে এমন জোয়ার সৃষ্টি করবে যা গ্রহ-উপগ্রহকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। চৌম্বক নিউট্রন তারা সবচেয়ে বেশি বিপদজনক। এসকল তারার চৌম্বকক্ষেত্র সাধারণ পালসারের চেয়ে হাজার গুণ বেশি। তবে, সৌভাগ্য যে, আমাদের নিকটবর্তী এমন কোন চৌম্বক নিউট্রন তারা নেই যা’ বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই, কারণ, সবচেয়ে নিকটতম নিউট্রন তারা আমাদের সৌরজগৎ থেকে ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সূর্যের পরে পৃথিবীর নিকটতম তারার নাম প্রোক্সিমা সেঞ্চুরি, তাও প্রায় ৪ আলোকবর্ষ দূরে। তাই, ভয় পাওয়ার কোন কারণই নেই। নিউট্রন তারা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না। এমনকি, কতটা নিউট্রন তারা আছে তাও জানা নেই। অনেকে বলেন, আমাদের গ্যালাক্সিতে ২০০০ নিউট্রন তারা আছে। আবার অনেকে মনে করেন, একশত কোটির বেশি আছে। তাই আমাদের গ্যালাক্সিতে কতটা নিউট্রন তারা আছে তা’ একেবারেই অজানা। উজ্জ্বল আলোকিত নক্ষত্র নক্ষত্রের তাপমাত্রার পরিসীমা আছে। তুলনামূলকভাবে শীতল তারাগুলোকে লাল বামন তারা বলে, আর অত্যন্ত গরম তারা নীল রঙের। নক্ষত্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যখন ১০,০০০ কেলভিনের উপরে যায় তখন আমাদের চোখে তারাগুলোকে নীল দেখায়। উজ্জ্বলতার দিক বিবেচনা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তারাগুলোকে ৬ ভাগে বিভক্ত করেন। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা যার বিশালতা-১, তার চেয়ে কম উজ্জ্বল, যার বিশালতা-২। এভাবে খুব অস্পষ্ট তারকা যার বিশালতা-৬। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সূক্ষভাবে উজ্জ্বলতা নির্ণয় করা হয়। বিংশ শতাব্দিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, তারার ভরের সাথে উজ্জ্বলতার একটা সম্পর্ক আছে। দেখতে হবে, একটি তারা কতটা প্রভাকর। আর উভয়ই নাক্ষত্রিক তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। সূর্যের চেয়ে ১০ গুণ বিশাল নক্ষত্র ১০০০ গুণ আলো বিকীর্ণ করে। ভর এবং উজ্জ্বলতা নক্ষত্রের রং-এর সাথেও সম্পর্কযুক্ত। বিশাল আয়তনের তারাগুলো বেশ গরম এবং নীল। আবার ছোট আয়তনের তারাগুলো কিছুটা ঠান্ডা এবং দেখতে অনেকটাই লাল। নক্ষত্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা নির্ধারণ করে তারা থেকে বিচ্ছুরিত আলোর রং কেমন হবে। যেমন, নীল তারা হলুদ তারার চেয়ে গরম, আবার হলুদ তারা লাল তারার চেয়ে গরম। এমন ধারণা থেকেই হ্যাচপ্রুং-রাসেল (Hertzsprung-Russell – H-R) চিত্র তৈরী করা হয়েছে। লেখচিত্রটি তারার উজ্জ্বলতা ও রং-এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে (পক্ষান্তরে তাপমাত্রাই দেখানো হয়েছে)। অধিকাংশ তারাই মেইন সিক্যুয়েন্সের রেখায় পড়েছে। উপরের বাম পাশ থেকে অধিক উজ্জ্বল নীল তারা শুরু হয়েছে এবং নীচের ডানপাশে তারাগুলো ম্লান হয়ে গেছে (বেগুনি)।
[লেখকঃ সাবেক অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা।]