মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম মুক্তমত শহরে সড়ক!!

শহরে সড়ক!!

নাজমুল হক বিলাস

শহরে বিভিন্ন রকমের সড়ক বা রাস্তা দেখা যায়। কোনটি প্রধান সড়ক, কোনটি এভিনিউ সড়ক, ছোট রোড, লেন ইত্যাদি। প্রধান সড়ক, যার মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যায়। বাকি অন্যান্য সড়কের মাধ্যমে একই এলাকার ভিতরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যায় যেখানে দূরত্ব কম। এ সকল সড়কের দুপাশে বাড়িঘর, অফিস-আদালত, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হসপিটাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকে।

কোন কোন সড়কের এলাকা আবাসিক এলাকা, আবার কোন কোন এলাকা বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে নির্দিষ্ট থাকে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্য নয় আবার বাণিজ্যিক এলাকায় আবাসিক ভবন গ্রহণযোগ্য হবে না। সাধারণত প্রধান সড়কের পাশের এলাকা বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এভিনিউ ও অন্যান্য ছোট সড়কের পাশের এলাকা আবাসিক এলাকা হয়ে থাকে, কিছু কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।

সড়কে যানবাহন চলে তাছাড়া মানুষ হাঁটাহাঁটি করে যানবাহনের মধ্যে আছে ভারি বাহন যেমন বাস-ট্রাক, আবার ছোট বাহনের মধ্যে আছে গাড়ি, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল, অযান্ত্রিক বাহন যেমন রিক্সা, সাইকেল ইত্যাদি। আবার যানবাহনের মধ্যে বাণিজ্যিক বাহন ও ব্যক্তিগত বাহন, এই দুই ভাগে পৃথক করা যায়।

প্রধান সড়কে যেকোন বাহনই চলতে পারে নিয়ম কানুন মেনে। কিন্তু এভিনিউ সড়ক ও অন্যান্য ছোট রাস্তায় ব্যক্তিগত বাহন ও অযান্ত্রিক বাহনের চলারই কথা। কিন্তু দেখা যায় অন্যান্য ছোট সড়কে সব ধরনের যান চলাচল করছে এটা নিয়মবহির্ভূত। প্রধান সড়ক ব্যতীরেকে ভারি বাহন ও বাণিজ্যিক বাহন এভিনিউসহ ছোট সড়কে ঢোকার কথা নয়। কেননা এভিনিউ ও অন্যান্য ছোট সড়কের দু’পাশে আবাসিক এলাকা থাকে। আরো থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হসপিটাল। যা প্রধান তুলনায় বেশি।

তাই এই সকল সড়ক দিয়ে যদি প্রতিনিয়ত সকল প্রকার ভারী গাড়ি ও বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচল করতে থাকে তাহলে আবাসিক এলাকায় বাস করা সকল সাধারণ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হবে, হাসপাতালে অসুস্থ ব্যক্তিদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। আবার আবাসিক ভবনে অনেক বৃদ্ধ মানুষ, অসুস্থ মানুষ, ফুলের মত ছোট শিশুরা থাকে তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে যাবে। শিক্ষার্থী শিশুদের পড়াশোনায় কষ্ট হবে, মনোযোগ নষ্ট হবে, সেই সাথে তাদের ভবিষ্যত নষ্ট হবে। অনবরত: ইঞ্জিন ও হর্ণের বিকট শব্দে কালা রোগ, মাথার বিকৃতি দেখা দিতে পারে।

এসব থেকে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া বর্তমানে মাঠ-ঘাট কমে যাওয়ায় শিশুরা এসকল ছোট রাস্তার উপরেই খেলাধুলা করে। এদের মধ্যে একেবারে কোলের শিশু থেকে বড় শিশুরাও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে।

এই অবস্থার সবোর্চ্চ উদাহরণ হচ্ছে ঢাকার মিরপুর ২ নং সেকশনের প্রশিকা মোড় থেকে এর বিপরীতে ৬ নং সেকশনের ছোট রোড এবং লেন সমূহ। এই রোড সমূহ অত্যন্ত বিপদজনক হয়ে গেছে। অথচ আইল্যান্ডের ফাঁকাটুকু বন্ধ করে সহজেই এর সমাধান করা যায়। বর্তমানে এটি চারমাথার রোড হয়ে গেছে, পূর্বে তিন মাথার রোড ছিল এখনো তিন মাথায়ই হওয়া উচিত।

এভিনিউ সড়কগুলোতে দিনে যত না সমস্যা রাতে ১০০ গুণ বেশি সমস্যা। দিনে সব ধরনের গাড়ি এসকল রাস্তায় চলছেই এবং যা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার তা তো হচ্ছেই। রাতে ছোট গাড়ি কমে যায় কিন্তু মালবাহী সকল ভারি গাড়ি এসকল রাস্তায় চলতে থাকে কেবল একটু দ্রুত যাওয়ার জন্য। অথচ তখন প্রধান সড়ক ফাঁকা থাকে।

কিন্তু তারা সুযোগ পেলেই এভিনিউসহ ছোট রাস্তা গুলো ব্যাবহার করতে থাকে। তারা দ্রুত বেগে চলার কারণে ইঞ্জিনের প্রচন্ড আওয়াজ তৈরি হয় এবং উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজাতে থাকে। ফলে এভিনিউ সড়কের দু’পাশের বাড়িঘর ও হসপিটালের ঘুমন্ত মানুষের ঘুম নষ্ট করা হয় অথচ রাতের ঘুম মানুষের অধিকার যা হনন করার অধিকার কারো নাই। প্রতিনিয়ত রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। অসুস্থ মানুষ, বৃদ্ধ মানুষ ও শিশুদের জন্য এই সমস্যা আরো প্রকট।

কয়েকটি ব্যবস্থা আনায়ন এর মাধ্যমে আমরা এসকল অশান্তি থেকে রেহাই পেতে পারি।

প্রথমতঃ অধিক চওড়া এভিনিউ সড়কে আইল্যান্ড বা রোড ডিভাইডার বসিয়ে রাস্তা কে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে হবে। এতে সড়ক নিরাপদ হবে এবং গাড়ির স্পিড কমে যাবে কিন্তু দ্রুত চলতে পারবে।

দ্বিতীয়তঃ প্রয়োজন ছাড়া প্রধান সড়ক ব্যতিরেকে এভিনিউ ও অন্যান্য ছোট সড়কে ভারি গাড়ি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক গাড়ি প্রবেশ করবে না। বিশেষ করে রাতে একেবারেই নয়। যদিওবা প্রবেশ করে গতিবেগ সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার এর বেশি হতে পারবে না এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া হর্ণ ব্যবহার করবে না।

তৃতীয়তঃ সকল যানবাহনের ইঞ্জিনে সাইলেন্সার(Silencer) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং হাইড্রোলিক হর্ণ, চড়া ও তীক্ষ্ণ শব্দের হর্ণের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। হর্নের আওয়াজ ২০ ডেসিবেল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বিকট শব্দের ইঞ্জিন এর মোটরসাইকেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।

খুব ভালো হয় এভিনিউ সড়কের যে কোনো এক মাথায় গেট লাগিয়ে দিলে যা রাত ১২টার পর বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। সরকার বা সিটি কর্পোরেশন এই ব্যবস্থা নিতে পারে।

উপরোক্ত ব্যবস্থা গুলি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহরের সকল প্রকার সড়কে যাতায়ত নির্বিঘ্ন হয় ও বসবাসকারী মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। শিশু, বৃদ্ধ ও  অসুস্থ মানুষের কষ্ট লাঘব হয়।

মানুষের জীবনযাপন নিরাপদ হয় এবং শিশুদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়। আর  শিশুদের ভবিষ্যতের সাথে সকল মানুষের ভবিষ্যৎ একসূত্রে গাঁথা রয়েছে।

লেখকঃ পরিবেশ ও বিজ্ঞান লেখক।

**মতামতের জন্য সম্পাদক / প্রকাশক দায়ী নয়

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

বরগুনার সওদাগর পাড়া এখন সবজির গ্রাম

বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া গ্রামে লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে ২২০ জন চাষীর ভাগ্য ফিরেছে। বর্তমানে ওই গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে...

ট্রাম্পের অভিষেক উপলক্ষে ঢাকার অভিনন্দন

ওয়াশিংটন ডিসিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করার প্রাক্কালে ঢাকা আজ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিতে আজ রাতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডের দাবোসে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে চারদিনের সফরে আজ ঢাকা ত্যাগ করবেন।

তিস্তা ব্যারেজ কমান্ড এলাকায় সেচের পানি দেওয়া শুরু 

তিস্তা ব্যারেজ কমান্ড এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ক্যানেলগুলোতে সেচের পানি দেওয়া শুরু হয়েছে। ফলে কমান্ড এলাকায় কৃষকরা বোরো চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন।...

Recent Comments