সোমবার, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম কৃষি বেত ফল ও কিছু কথা!

বেত ফল ও কিছু কথা!

সরকার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ পিএইচডি

বাংলার মাটির গুণে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পলি, বৃষ্টিপাত আমাদের দেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি। দেশে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি প্রজাতির বন্য গাছপালা। বেতগাছের ফলই বেতফল। অপ্রচলিত ফল হলেও এটি অনেকের কাছে খুবই প্রিয়।  বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়- বেতফল, বেত্তন, বেথুন, বেথুল, বেতগুলা, বেতগুটি, বেত্তইন ইত্যাদি।

বেতফল গোলাকার, লম্বায় ১ থেকে ১.৫ সেঃমিঃ। আকারে ছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি,যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। খোসা শক্ত ভেতরটা নরম এবং বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। থোকায় থোকায় ফলে। প্রতি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। ফুল ধরার আগে গাছ থেকে একধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি রস খেতে বেতগাছে ভিড় জমায়। কিন্তু ফলের জন্য বেতের চাষ করা হয় না।

বেত একপ্রকার সপুষপক উদ্ভিদ। বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলে দেখা যায়। বেতের বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis, যা Arecaceae পরিবারভুক্ত। এছাড়াও আরো কয়েকটি বৈজ্ঞানিক নাম প্রচলিত আছে। আদি আবাস হিমালয়ের উষ্ণ এলাকা। বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির বেতগাছ পাওয়া যায়। তাছাড়াও কাঁটাযুক্ত এই বেতগাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে- যেমন জায়ত বেত, গোলাফ বেত, কেরাক বেত, পাটি বেত ইত্যাদি। এদের কাণ্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়।

চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে। কিছুদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হয়। বেতগাছ জঙ্গলাকীর্ণ কাঁটাঝোপ আকারে দেখা যায়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও হাওরের কান্দাতে বেতগাছ জন্মে। এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু বেত চাষের বেশ উপযোগী হলেও বিলুপ্ত হতে চলেছে বেতগাছ এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল।

বেত অতি মূল্যবান ও অর্থকরী উদ্ভিদ। উন্নতমানের হ্যান্ডিক্রাফট, গৃহের আসবাবপত্র তৈরির জন্য বেতের ব্যবহার বেশি। কস স্বাদযুক্ত ফল গ্রামীণ শিশুদের অতি প্রিয়। এ ফল বাজারে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেতের কচি কাণ্ড তরকারি হিসেবেও খাওয়া হয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

ক্রেতা বিক্রেতার হাঁক ডাকে সরগরম হয়ে উঠে হাতিয়ার চরঈশ্বর সবজি বাজার

ভোরের আলো ফোটার আগেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরগরম হয়ে উঠে হাতিয়ার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের নিরাপদ সবজি বাজার। কৃষকদের পরম যত্নে আবাদ করা সবজি বিক্রি হয়...

আগামী নির্বাচনকে এযাবৎকালের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাইঃ প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সরকার এযাবৎকালের সেরা করার পরিকল্পনা করছে, যাতে এটি গণতন্ত্রের একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত...

পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যেন দৃশ্যমান হয় ইউএনডিপি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা’র পরামর্শ

ইকোসিস্টেম, প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছুর অবস্থান যা যেখানে আছে তা ঠিক রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের...

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ২০২৫ সালের হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০২৫ সালের হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দায় স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে।

Recent Comments