বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
- বিজ্ঞাপন -
হোম কৃষি বিশেষ ফসল চাষের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি

বিশেষ ফসল চাষের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি

  • নাজমুল হক বিলাস

খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি কাজের করতে হয়। কৃষি কাজের মাধ্যমে ফসল উৎপন্ন করা হয়। উপযুক্ত ফসল প্রাপ্তির জন্য মাটি উর্বর হওয়া একান্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাটিকে উর্বর করা যায়। ঠিক এমনই একটি পদ্ধতি হচ্ছে, স্বয়ং কৃষি কাজের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি।

দীর্ঘদিন চাষ না করা জমি অথবা উর্বরতা হারিয়ে ফেলা জমি বা যেখানে একেবারে কৃষি কাজ সম্ভব হচ্ছে না এমন জমির মাটিকে উর্বর করার জন্য বিশেষ ধরনের ফসল চাষ করা যেতে পারে। এরকম একটি ফসল হচ্ছে সরিষা। অনুর্বর জমিকে কিছুটা কৃষি উপযোগী করে সেখানে সরিষা চাষ করলে জমি উর্বরতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা গাছের বিশেষ কিছু গুণাগুণ রয়েছে যার মাধ্যমে মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান যা উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন তা মাটিতে চলে আসে এবং মাটি উর্বর হয়ে যায়। এছাড়া সরিষা ফুলে প্রচুর পরাগায়ন ঘটে। সেই কারণে ফসল বৃদ্ধি পায়। মৌমাছি ও অন্যান্য উপকারী পতঙ্গের আগমন ঘটে। এ সবকিছু মিলে একত্রে মাটির জন্য কাজ শুরু করে। সেই সাথে মধু চাষ করে বাড়তি ফল লাভ করা যায়।

সরিষার মত আরেকটি ফসল হচ্ছে ধনিচা বা ধঞ্চে। এই ফসল আবাদ করার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। আবার ফসল প্রাপ্তির পর এই উদ্ভিদের ডালপালা ও পাতা মাটিতে ছড়িয়ে রাখলে উত্তম সার হিসেবে কাজ করে। ধনিচা ও সরিষা উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম কিন্তু সেই তুলনায় বিক্রি করে লাভ বেশি করা যায়। সরিষা ধনিচা পরিবেশের জন্য উপকারী ফসল।

আরো একটি ফসল হচ্ছে নীল অর্থাৎ নীল চাষ। অতীতে নীল চাষ নিয়ে অনেক দুঃখজনক ইতিহাস রয়েছে। বর্তমানে নীলচাষ খুব একটা চোখে পড়ে না। নীল একটি অর্থকারী ফসল। এই উদ্ভিদের বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে। ধনিচা গাছের মত নীল গাছও যদি জমিতে ফেলে রাখা হয় বা সারা জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে জমির জন্য এই গাছ সার হয়ে যায়। নীলচাষে খরচ ও পরিশ্রম কম।
এই সকল উপকারী উদ্ভিদ পরপর কয়েক বছর জমিতে চাষ করলে জমি উরবর হয়ে উঠে তখন অন্য ফসল চাষ করা যায়।

এছাড়া ডাল জাতীয় উদ্ভিদ জমিতে চাষ করার মাধ্যমে জমি নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ হয়। নাইট্রোজেন উদ্ভিদের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। ডাল জাতীয় উদ্ভিদ চাষ করার কারণে নাইট্রোজেন  মাটিতে প্রবেশ করে এবং মাটি উর্বর হয়।

পশুপালন কৃষিকাজের অন্তর্ভুক্ত একটি কাজ। সারাদেশে কৃষি কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা পশু পালন করে থাকেন এছাড়া কিছুসংখ্যক কৃষক কেবল পশুপালনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পশু দ্বারা হালচাষ করা হয় এবং এই সকল প্রাণীদের মাংস ও দুগ্ধ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এসকল প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাণী হচ্ছে গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি। যা উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হচ্ছে এসকল প্রাণীদের রক্ত মাটির জন্য উত্তম সার। এসকল তৃণভোজী প্রাণী প্রচুর সবুজ খাদ্য সরাসরি প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে ঘাস, গাছের পাতা, গাছের ফল। আমরা জানি গাছ পাতার মাধ্যমে সালোক সংশ্লেষণ কর্ম করে থাকে। যে কারণে পাতায় সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান যুক্ত হয় এবং উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় উপাদান গাছের পাতাতেই তৈরি হয়। এই কারণে গাছের পাতা সবুজ হয়ে থাকে। তৃণভোজী প্রাণী গরু, ছাগল ইত্যাদি যখন এই ঘাস, পাতা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তখন তাদের রক্তে সরাসরি বিশেষ পুষ্টি উপাদান চলে যায় এবং তাদের শরীরে শক্তি তৈরি করে। এ থেকে বোঝা যায় যে সকল প্রাণীর রক্তে প্রচুর উপকারী উপাদান থাকবে যা মাটির জন্য বা গাছের জন্য খুবই উপকারী। এই রক্ত যখন মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে তখন সেই রক্ত মাটির জন্য সার হয়ে যাবে ফসলের জন্য উপকারী হবে।

সারাবছর সারা দেশব্যাপী গরু ছাগল ইত্যাদি প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ এর জন্য জবেহ করা হয়, সেখান থেকে প্রচুর রক্ত পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে একটি বিশেষ সুযোগ হচ্ছে বছরের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব কোরবানি ঈদ। এই ঈদে প্রচুর গরু ছাগল মহিষ ইত্যাদি প্রাণী কুরবানী করে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করা হয়। কাজ শেষে এই সকল প্রাণীর রক্ত আমরা নদী নালায় ফেলে দিয়ে থাকি। অথচ এই সকল রক্ত সংগ্রহ করে যদি জমিতে ছিটিয়ে দেয়া যেতো বা জমিতে ফেলে দেওয়া হতো তাহলে জমির মাটির উর্বরতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেত এবং ফসল চাষে জৈব সার হয়ে যেত এবং অন্যান্য রাসায়নিক সারের চাহিদা কমে যেত। এই কাজের সুযোগ এখনও রয়েছে, সব সময় থাকবে। সারা বছরই গৃহপালিত প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে রক্ত প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। জমিকে উর্বর করার জন্য ইহা একটি বড় সুযোগ। আমাদের উচিত এই সুযোগ হাতছাড়া না করা।

অতএব বিভিন্ন উপায় ফসল চাষের মাধ্যমে বা পশু পালনের মাধ্যমে আমরা খুব অল্প পরিশ্রমে, অল্প খরচে নিজেদের জমিকে উর্বর করতে পারি, জমিতে রাসায়নিক সারের চাহিদা কমিয়ে আনতে পারি, খরচ কমিয়ে আনতে পারি এবং যথেষ্ট পরিমাণে ফসল উৎপন্ন করতে পারি। এর মাধ্যমে দেশের খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং দেশ খাদ্যে সমৃদ্ধ হবে।

1 মন্তব্য

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়াপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  তারেক রহমানকে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির...

ভারসাম্য, ক্ষমতায়ন এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে পার্বত্যবাসীকে আরও বেশি পারদর্শী হতে হবেঃ উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) জনাব সুপদ্রীপ চাকমা বলেছেন, পরিবেশ সুরক্ষায় ৪০ শতাংশ অক্সিজেন পাওয়া যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা থেকে।...

আজ শুরু হচ্ছে ১১তম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সামরিক সংলাপ

১১তম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সামরিক সংলাপ আজ ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে শুরু হচ্ছে। সংলাপটি ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ...

গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবেঃ সংস্কার কমিশন 

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ...

Recent Comments