গ্রামীণ কৃষি ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ বাড়াতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড আজ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটা যুব সমাজ আছে। যারা কাজে অত্যন্ত দক্ষ। সুইজারল্যান্ড যদি এখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করে তবে উভয় দেশই লাভবান হবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ, উদার বিনিয়োগ নীতি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, অবকাঠামো সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের জনসম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বড় জনশক্তি রয়েছে। বিভিন্ন রকম কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে এই জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যাতে এই জনসম্পদকে দেশের উন্নয়নে ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়।
বিনিয়োগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মত হয়ে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানে আরও সুযোগ রয়েছে, আরও বিনিয়োগের অনেক সম্ভবনা রয়েছে।’
মানব দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ তারা লক্ষ্য করেছে। দক্ষতা উন্নয়নে তারা বাংলাদেশ সরকারকে সব রকম সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সব রকম সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করে সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে এবং বাংলাদেশকে যতরকম সহায়তা দেওয়া সম্ভব তারা সে চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, সংকটময় সময়ও বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে তিনি মুগ্ধ।
করোনার কারণে তিনি বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে পারেননি জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি প্রথম সুযোগে বাংলাদেশের সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে আগ্রহী।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের সামর্থে পদ্মা ব্রিজ তৈরি করছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যে যোগাযোগ সৃষ্টি হবে সেটা সরাসরি আমাদের জিডিপিতে অবদান রাখবে।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর প্রভাব দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পড়তে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যেমন সোলার প্যানেল বসানো, অবকাঠামোসহ গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন শুরু হয়েছে।
গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ধরনের যেকোন কাজে সুইস সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত, সবার জন্য আবাসন, সবার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থাসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের সফলতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার যেভাবে কাজ করে যাচেছ এবং এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রশংসা করেন সুইস রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তার প্রশংসা করেন সুইস রাষ্ট্রদূত।
‘ভিশন-২০৪১’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান -২১০০’ বাস্তবায়নে সুইজারল্যান্ড সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলেও জানান দেশটির রাষ্ট্রদূত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালে সুইজারল্যান্ড সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজেও সেই সফরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন।
সুইজারল্যান্ড সফরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসায় সুইজারল্যান্ড থেকে ডাক্তার এবং নার্সের ব্যবস্থা করেছিলেন, সে কথা ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতি বঙ্গবন্ধুকে আকৃষ্ট করেছিল,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষতা এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়-সুইজারল্যান্ডের এই দর্শন বঙ্গবন্ধুকে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বলতেন তাঁর লক্ষ্য বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগলিক সাদৃশ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক ভাবে সুইজারল্যান্ডের অবস্থান ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে এবং একই রকম ভাবে বাংলাদেশের জিওগ্র্যাফিক্যাল অবস্থান দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে। বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের মিল রয়েছে।
বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডের নব নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান এবং দায়িত্বপালনে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।