গ্রামীণ কৃষি ডেস্কঃ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর কৌশলগত অবস্থান ওয়াশিংটন ডিসির ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরো মজবুত করেছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং সফররত মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগুনের যৌথ প্রেস ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
মোমেন বলেন, ‘তিনি (বিগুন) আমাদের বলেছেন যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পিছনে কয়েকটি কারণ হলো (বাংলাদেশের) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, স্থিতিশীলতা। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের এখানে একটি অত্যন্ত স্থিতিশীল সরকার ও গণতন্ত্র বিরাজ করছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উচ্চ পর্যায়ের এই সফর প্রমাণ করছে যে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ক্রমশ মজবুত হচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে তা অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে… বাংলাদেশ এই অঞ্চলে আমাদের কথার কেন্দ্র।
কোভিড পরিস্থিতিতে সাড়াদান সম্পর্কে তিনি আশ্বাস দেন যে, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য টীকা উৎপাদনের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরী সম্ভাব্য টিকা বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাজাপ্রাপ্ত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে সুখবর আছে (খুনীর প্রত্যর্পণ)… তিনি (বিগুন) বলেছেন, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি দেখছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, তিনি রোহিঙ্গা বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ এই সংকট সমাধানে কাজ করার লক্ষ্যে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে (রোহিঙ্গা সংকট) একটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সাড়া জাগানো দরকার … সকল দেশেরই এ লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা দরকার … অবশ্যই, এটি কেবল বাংলাদেশের দায়িত্ব নয়।’
রোহিঙ্গা ইস্যুকে একটি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিগুন বলেন, এই অঞ্চলের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের উচিৎ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সমান স্পষ্টভাবে কথা বলা এবং (সঙ্কটের সমাধানের লক্ষ্যে) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকটের একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
তারা বাংলাদেশে আরো মার্কিন বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেছেন।
বিগুন বলেন, প্রবাসী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিয়ামিতে আরেকটি বাংলাদেশী কাউন্সিলর অফিস খোলার অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে সকালে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২-এর স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সেখানে পরিদর্শক বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অংশীদার ও বন্ধু হিসাবে গর্বিত যখন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করছে। আমরা আগামী ৫০ বছর এবং তারও পরে একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা করছি যা বঙ্গবন্ধুকে গর্বিত করবে।’ এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার তার সঙ্গে ছিলেন।
বিগুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেন।
এ আগে, যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন দিনের সফরে বুধবার বিকেলে ঢাকায় আসেন এবং গত রাতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে নৈশভোজ সভায় যোগ দেন।
এ সময় উভয় পক্ষ কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন এবং মার্কিন উপমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবিকাশ বিবেচনা করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করেন।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ তার পণ্যগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সহায়তাও চেয়েছে।
বৈঠক শেষে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা তাকে বাংলাদেশের অফশোর ব্লকগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে অবহিত করেছি এবং তিনি বলেছেন যে, মার্কিন এনার্জি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তা উৎসাহজনক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করবেন।