বুধবার, মার্চ ২৬, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নক্ষত্র ও নক্ষত্র-জগতের ক্রমবিকাশ

নক্ষত্র ও নক্ষত্র-জগতের ক্রমবিকাশ

অধ্যাপক ড.হোসেন মনসুর 

গ্যালাক্সিতে শুধু কোটি কোটি নক্ষত্রই থাকে না, নক্ষত্রগুলোর মধ্যবর্তী বিশাল স্থানে গ্যাস ও ধূলিকণাও থাকে। নক্ষত্রগুলোর মধ্যবর্তী স্থানকে আন্তঃনক্ষত্রিক মাধ্যম বা ইন্‌টারস্টেলর মিডিয়াম (interstellar medium) বলে। আন্তঃনক্ষত্রিক মাধ্যমে ঘন গ্যাস ও ধূলিকণার আধিক্য এলাকাকে আনবিক মেঘ বলে। আনবিক মেঘে মূলতঃ হাইড্রোজেন গ্যাস থাকে। তা’ ছাড়াও, হিলিয়াম, কার্বন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন থাকে। আনবিক মেঘ বিভিন্ন আকারের হয় এবং এর কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। বিশাল বা বড় আকারের আনবিক মেঘে যে ভর থাকে তা’ প্রায় ১০ লক্ষ সূর্যের ভরের চেয়েও বেশি এবং শত শত আলোকবর্ষ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ধূলিকণা থাকার ফলে ওর ভিতরে আলো ঢুকে না। তাই, ওই এলাকা অন্ধকার দেখায়। অনেকসময় তাকে অন্ধকার নেবুলা বলে। ওই এলাকাকে অনুসন্ধান করতে হলে ইন্‌ফ্রারেড ও রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হয়।এই বিশাল আণবিক মেঘ প্রচন্ড গতিতে অলোড়িত হতে থাকে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আণবিক মেঘের গ্যাস আর ধূলিকণা একই যায়গায় থাকে না। তারা বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।

এই আলোড়নে গ্যাস ও ধূলিকণার অণু-পরমাণু আণবিক মেঘের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পরিমানে জমা হয়, অর্থাৎ আণবিক মেঘের কথাও বেশি পদার্থ জমা হয়, আবার কোথাও কম।আণবিক মেঘে তুলনামূলকভাবে যেখানে বেশি ঘন গ্যাস ও ধূলিকণার অণু থাকে। যদি কোন এলাকায় গ্যাস ও ধূলিকণার বিশাল স্তুপ হয়ে যায় তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে স্তুপ ধসে যায় এবং খন্ড-বিখন্ড হয়ে আলাদা হয়ে যায়। নক্ষত্র গঠন প্রক্রিয়ায় গ্যাসীয় অণু (কার্বনমোক্সাইড ও হাইড্রোজেন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অণুগুলো খন্ডিত আণবিক মেঘের তাপমাত্রা অ্যাবসোলিউট জিরো বা পরম শূন্য (-২৭৩.১৫ ডিগ্রী)-এর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এই তাপমাত্রায় গ্যাসের পরমাণুগুলো একে অন্যের সাথে জোড়া লেগে শক্তভাবে আটকে যায়। খন্ডিত মেঘের ঘনত্ব বহুগুণ বেড়ে যায় এবং আণবিক মেঘকে অনেক চাপ থেকে মুক্ত করে। অন্যদিকে, ধূলিকণাগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র, এক হাজার ভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট। এই কণাগুলো খুবই গুরুত্বপুর্ণ, কারণ কণাগুলো বাইরের নক্ষত্রের আলোকে ভিতরে ঢুকতে দেয় না। ফলে, আণবিক মেঘ গরম হয় না, বরং ঠান্ডা হয়। তাই, আণবিক মেঘ খুব ঠান্ডা এবং ঘন গ্যাস আলো ঢুকতে দেয়না বিধায় অন্ধকার দেখা যায়।খন্ডিত আণবিক মেঘের আকার অখন্ড আণবিক মেঘের আকারের তুলনায় অনেক ছোট। ওই এলাকা মাত্র কয়েক শত অ্যাস্ট্রনমিক ইউনিটের সমান (পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের সমান দূরত্বকে এক অ্যাস্ট্রনমিক ইউনিট বলে, অর্থাৎ, এক অ্যাস্ট্রনমিক ইউনিট = ৯৩,০০০,০০০ মাইল বা ১৫০,০০০,০০০ কিলোমিটার)। আনবিক মেঘের এই টুকরো গুলোই পরবর্তীতে আলাদাভাবে একটি করে বা দুইভাগ বিশিষ্ট নক্ষত্র গঠন করে, আর শিশু নক্ষত্রের গ্রহ-উপগ্রহের ডিস্ক গঠন করে।প্রোটোস্টার বা বেবি স্টার(শিশু তারকা)আণবিক মেঘের (molecular cloud) কেন্দ্র যখন একবার ভেঙে যায় তখন ভাঙা খন্ডগুলো মেঘের অন্যান্য অংশ থেকে একদম আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে নিজের নিজের মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে স্বকীয়তা বজায় রাখে ।

এটাই হল, প্রোটোস্টার। প্রোটোস্টার গঠিত হওয়ার সাথে সাথে আলগা গ্যাস ওর কেন্দ্রের উপর পড়তে থাকে। পতিত গ্যাস তার গতিশক্তিকে (kinetic energy) তাপে রূপান্তর করে ছেড়ে দেয়। যার ফলে প্রোটোস্টারের কেন্দ্রে তাপ ও চাপ উভয়ই বাড়তে থাকে। যখন তাপমাত্রা হাজার হাজার ডিগ্রীর কাছে পৌছে তখন প্রোটোস্টার ইনফ্রারেডের (IR) একটি উৎসে পরিনত হয়।একটি শিশু তারকার প্রাথমিক অবস্থার ভরের পরিমাণ পূর্ণ তারকা্র (প্রোটোস্টারের) ভরের তুলনায় শতকরা মাত্র এক ভাগ। বাইরের পদার্থ পড়তে থাকায় প্রোটোস্টারের আবরণ বাড়তেই থাকে। কয়েক মিলিয়ন বছর পরে প্রোটোস্টারের কেন্দ্রে (কোরে) নিউক্লীয় সংযোজন (থার্মোনিউক্লিয়ার ফিউশন) শুরু হয়। ফলে প্রচন্ড নাক্ষত্রিক বায়ুপ্রবাহ নূতন ভরের পতনকে বন্ধ করে দেয়।আণবিক মেঘের কেন্দ্র ধসে যাওয়ার খন্ডগুলো প্রাথমিক অবস্থায় বিকীরণের (রেডিয়েশনর) জন্য স্বচ্ছ থাকে এবং ধসে পড়াও খুব দ্রুততার সাথে ঘটে। খন্ডিত অংশ যতই ঘন হতে থাকে ততই সে অস্বচ্ছ হতে থাকে এবং আলো বিকীরণ (রেডিয়েশন) আটকা পড়ে যায়। যারফলে, কেন্দ্রে তাপ ও চাপ উভয়ই বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে, চাপ এত বেড়ে যায় যে, কোরের (কেন্দ্রের) ভিতর বাইরে থেকে আর গ্যাস পড়তে দেয় না। তখন খন্ডিত বস্তুটি স্থিতাবস্থায় আসে এবং প্রোটোস্টারে পরিনত হয়।নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণের কারণে যখন আণবিক মেঘের কোরের বা কেন্দ্রের ঘন অংশটি ধসে যায়, তখন থেকেই প্রকৃতপক্ষে, নক্ষত্রের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

গ্যাস ও ধূলিকণা সম্বলিত এসব কোরের ভর সাধারণতঃ দশ হাজার সৌর ভরের সমান। আণবিক মেঘের বাইরের অংশের ঘনত্ব থেকে কেন্দ্রের ঘনত্ব বেশি থাকায় প্রথমে কেন্দই ধসে যায়। কেন্দ্রের ধসের কারণে আণবিক মেঘ ভেঙে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হয়। এক একটি খন্ডের আকার প্রায় ০.১ পারসেক (এক পারসেক = ৩.২৬ আলোকবর্ষ; ৩১ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার) এবং পদার্থ ১০ থেকে ৫০ সৌর ভরের সমান। এই খন্ডগুলোই প্রোটোস্টারে রূপান্তরিত হয় এবং সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় এক কোটি বছর লাগে।আনবিক মেঘের ধসশিশু তারকার জন্মপাঠকদের সুবিদার্থে আণবিক মেঘ থেকে একটি উজ্জ্বল তারা এবং তার গ্রহ, উপগ্রহ (তারার পরিবার) গঠন করার প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চিত্রসহ নিম্নে বর্ণনা দেয়া হলোঃআনবিক মেঘ (চিত্র-১)আনবিক মেঘ প্রচন্ড ঠান্ডা, তাপমাত্রা পরম শূন্যের (পরম শূন্য, K=0= -২৭৩.১৫ সেন্টিগ্রেড) কাছাকাছি থাকে। ওর ভিতরের গ্যাস এবং ধূলিকণা ধসে পড়ে (জমাট হয়)। পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র হল, পদার্থ সঙ্কুচিত হলে ঘনত্ব বাড়ে এবং তার তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। তাই, গ্যাস এবং ধূলিকণা ধসে পড়ার পর পরই ধীরে ধীরে আবার গরম হতে থাকে। ধসে পড়া এলাকার বাইরের কিনারার দিকে তাপমত্রা পরম শূন্যের উপরে ১০ ডিগ্রী (অর্থাৎ ১০ ডিগ্রী কেলভিন) এবং ভিতরের এলাকার তাপ ধীরে ধীরে বেড়ে ৩০০ ডিগ্রী কেলভিন হয়।প্রাক-নক্ষত্রীয় কোর (চিত্র-২)যখন ধসে যাওয়ার এলাকার আকার ১০,০০০ অ্যাস্টোনমিক ইউনিট হয় তখন তাকে প্রি-স্টেলার কোর (প্রাক-নক্ষত্রীয় কোর) বলা হয় (চিত্র-২)। অর্থাৎ, পরিনত নক্ষত্র নয়, ওই অবস্থা হল, নক্ষত্রে পরিনত হওয়ার আগের অবস্থা। কোর বলতে, আনবিক মেঘের গ্যাস ও ধূলিকণার ঘন কেন্দ্রীয় এলাকা।

এই কোর পরবর্তীতে জন্ম নেয়া নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ কোর।প্রোটোস্টার বা শিশু তারকা (বেবি স্টার-চিত্র-৩)পরবর্তী ৫০,০০০ বছর ধরে প্রি-স্টেলার কোর সঙ্কুচিত হতে থাকে। মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় এ সময়টি অবশ্য অত্যন্ত অল্প সময়। যাহোক, পঞ্চাশ হাজার বছর পরে একই গ্যাস ও ধূলিকণা নিয়ে যখন কোর সঙ্কুচিত হয়ে ১,০০০ অ্যাস্টোনমিক ইউনিটে আসে, তখন কোরের ব্যাস আগের তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে যায়। ফলে, ধসে যাওয়া এলাকার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। পঞ্চাশ হাজার বছর পরে এই প্রক্রিয়ায় কেন্দীয় কোরের চারদিকে একটা ডিস্ক গঠন করে, সেই সাথে ডিস্‌কের দুই মেরু থেকে অতিরিক্ত পদার্থগুলো বাইরের দিকে উদ্গিরণ বা নির্গত করে। নক্ষত্রের দু’টি মেরু এবং অক্ষ পৃথিবীর মতই। অক্ষের চারপাশে নক্ষত্রটি ঘূর্ণন করতে থাকে। ছবিতে ঝর্নার মত দেখা যাচ্ছে যেখান থেকে অতিরিক্ত পদার্থ নির্গত করে দিচ্ছে। এমন কাঠামোকে ‘জেট। বলা হয়ে থাকে এবং তা’ পদার্থ বিদ্যার সূত্র অনুসরণ করে। সঙ্কোচনের সাথে সাথে গ্যাস ও ধূলিকণার এমন অবিরাম নির্গমন ডিস্কসহ সবকিছুকে ঘূর্ণনে সাহায্য করে। এই জেট পুরা সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রাখে। সর্বশেষে, এই সিস্টেমই হল, প্রোটোস্টার বা শিশু তারকা (বেবি স্টার)। একটি পূর্ণাঙ্গ নক্ষত্রে পরিনত হওয়ার আগের অবস্থা ‘শিশু তারকা’।সংক্ষিপ্তভাবে সহজ কথায় বলছি, আনবিক মেঘ ভেঙ্গে ছোট ছোট খন্ড হয়। খন্ডিত অংশগুলোর প্রায় পুরোটাই হাইড্রোজেন গ্যাস, আর সেগুলোই পরে তারা হয়। খন্ডিত হওয়ার সাথে সাথে খন্ডগুলোর ভিতরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন কণার ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার কারণে শিশু তারার ঘূর্ণন শুরু হয়। শিশু তারা যখন একটি পুর্ণ তারায় রূপান্তর হয়, তখন তার কোরের তাপমাত্রা এককোটি কেলভিন অতিক্রম করে। মনে রাখতে হবে, জ্বালানি কিন্তু হাইড্রোজেন।প্রাক-নক্ষত্রের কোর থেকে নক্ষত্রএকটি শিশু নক্ষত্রের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ডিস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিস্ক প্রধানত গ্যাস দ্বারা গঠিত হয়। এই গ্যাস ডিস্কের সাথে ঘুরতে থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রোটোস্টারের পৃষ্ঠতলের নিকটে আসে। যখন গ্যাস প্রোটোস্টারের পৃষ্ঠতলের খুব কাছে আসে তখন মাধ্যাকর্ষণের কারণে পৃষ্ঠতলের উপর পড়ে যায়। বৃদ্ধির এ প্রক্রিয়াকে পরিবৃদ্ধি বা অ্যাকক্রেশন (accretion) বলে।টি-টৌরি তারা (চিত্র-৪)পরবর্তী প্রায় এক হাজার বছর ধরে গ্যাসের অণু গ্রহণ করে নব নক্ষত্র তার ডিস্কের পরিবৃদ্ধি করে। আবার এটাও হতে পারে, ডিস্ক থেকে অনু বিতারিত করে । যাহোক, ইতোমধ্যে কেন্দ্রে নিউল্কিয়ার রি-অ্যাকশন ঘটানোর জন্য নব নক্ষত্রের ঘনত্ব ও আকার যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিউল্কিয়ার রি-অ্যাকশন শুরুর সাথে সাথে নক্ষত্র প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে এবং আলো বিকীরণ করতে থাকে। নব নক্ষত্রের এই অবস্থাকে টি-টৌরি তারা বলে। টি-টৌরি তারকার বৈশিষ্ট হল, প্রথম দৃশ্যমান নূতন ছোট থেকে মাঝারি তারা, যার বয়স মাত্র এক কোটি বছরের কম এবং প্রায়ই এর উজ্জ্বলতার তারতম্য ঘটে। প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্র এই প্রথম দৃশ্যমান হয়।টি-টৌরি পর্যায়স্মূহযখন একটা শিশু তারকা হাইড্রোজেন পোড়ানো জ্বলন্ত তারায় রূপান্তরিত হয়, তখন থেকেই ঘূর্ণনের অক্ষ বরাবর প্রচন্ড গতিতে নক্ষত্রীয় বায়ু প্রবাহ হতে থাকে। নক্ষত্রীয় ঝড় হল, ইলেক্টন, প্রোটন, আর বিভিন্ন ভারী ধাতুর পরমানুর প্রবাহ, যার গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২,০০০ কিলোমিটার। অনেক নবীন তারার অক্ষের দুইদিক থেকেই নক্ষত্রীয় বাতাস বেড় হতে থাকে। যেমন কয়লা পুড়ে ছাই হয়, তেমনি হাইড্রোজেনের শেল পুড়ে হিলিয়াম হয় এবং উৎপন্ন হিলিয়াম কেন্দ্রে (কোরে) পতিত হয়। ফলে, কোরের ভর বাড়তে থাকে, সেই সাথে মাধ্যাকর্ষণও বাড়তে থাকে। এই অতিরিক্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কোরকে এবং কোরের চারদিকে হাইড্রোজেন প্রজ্জ্বলিত গোলাকার শেলকেও সঙ্কুচিত করে। এটা একটি নক্ষত্রের প্রাথমিক জীবনের একটি অধ্যায়, যাকে টি-টৌরি (বা টি-টোরাই-T-Tauri) অবস্থা বলা হয়।শিশু তারকার ধসের পরিনামে টী-টৌরি তারার চারপাশে সাধারণত একটি বিশাল, অস্বচ্ছ ও গোলাকার ডিস্ক তৈরী হয়। এই ডিস্কটি নক্ষত্রের তলের সাথে মিশে যায়। এই ডিস্ক থেকে (ইনফ্রারেড বা অবলোহিত তরঙ্গদৈর্ঘ) এবং নক্ষত্রের তলের উপরে যেখানে পদার্থ এসে পড়ে সেই জায়গা থেকেও (অপটিক্যাল বা আলোকিক ও অতিবেগুনী তরঙ্গদৈর্ঘ) রশ্মিবিকীরণ করতে থাকে। কোনভাবে তারকার উপর পতিত পদার্থের একটা অংশ ডিস্কের উপর থেকে একরকম লম্বালম্বিভাবে ‘জেট’-এর মত নির্গত হয়। পরিবাহী ডিস্ক শেষ পর্যন্ত নক্ষত্র থেকে অপসারিত (আলাদা) হয়। সম্ভবত, তখনই সেই নক্ষত্রের গ্রহ-উপগ্রহ গঠিত হয়। নবতারার গায়ে কালো দাগ থাকে, যেমন সূর্যের গায়ে কালো দাগ আছে।

কোন কোন তারকায় এই দাগ অনেক জায়গা জুড়ে থাকে।নক্ষত্র জগতের প্রাথমিক অবস্থা (চিত্র-৫)এক পর্যায়ে নক্ষত্র ডিস্কের উপর থেকে পদার্থ গ্রহণ করা বন্ধ করে। অবশিষ্ট পদার্থ কিন্তু নক্ষত্রের চারদিকে ডিস্কের আকার নিয়েই থাকে। নক্ষত্র বৃদ্ধির জন্য ডিস্ক আর কোন পদার্থ সরবরাহ করে না, বরং ডিস্ক এখন গোলাকার ঘূর্ণীয়মান পথার্থের তল, যা ধীরে ধীরে নক্ষত্র থেকে আলাদা হয়ে নক্ষত্রের চারদিকে নিজস্ব কক্ষে ঘুরতে থাকবে। এই খন্ডগুলো নক্ষত্র গঠন প্রক্রিয়ার অবশিষ্ট পদার্থ, যেগুলো জমা হয়ে নূতন গ্রহ-উপগ্রহ গঠন করেছে।নক্ষত্র জগৎ (চিত্র-৬)জমতে জমতে যখন ডিস্ক নিঃশেষ হয়ে যায় এবং সকল গ্রহ-উপগ্রহ গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তখনই সর্বশেষে চুড়ান্তভাবে নক্ষত্র জগতের সৃষ্টি হয়। নক্ষত্রের কোর বা কেন্দ্র একটি একটি পারমানবিক চুল্লিতে পরিনত হয়। কেন্দ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নক্ষত্রের বাইরের শেলে হাইড্রোজেন গ্যাস পুড়তে থাকে এবং হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। যখন কেন্দ্রের তাপমাত্রা ২০০,০০০,০০০ সেন্টিগ্রেড ঊঠে, তখন হিলিয়াম পরমাণু কার্বন পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। এই নিউক্লিয়ার ফিউশনই তারাকে শক্তি জোগায়। প্রথমদিকে কোরে হাইড্রোজেন পুড়ে কোর হিলিয়াম সমৃদ্ধ হয়। পড়ে হাইড্রোজেন কোরের বাইরে একটা শেল তৈরি করে পুড়তে থাকে। পরবর্তী ১০ বিলিয়ন বছর ধরে নক্ষত্রের কেন্দ্র পারমানবিক চুল্লি হিসেবে জ্বলবে এবং রশ্মি বিকীরণ করবে, যেমন আমরা সূর্যের রশ্মির বিকীরণ দেখছি, যাকে আমরা সূর্যের আলো বলি।

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন তারেক রহমান

যশোরে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। যশোরের জেলা ও দায়রা জজ শেখ...

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে হটলাইন চালু

নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি আক্রমণাত্মক ভঙ্গি, কটূক্তি, ইভ টিজিং, হেনস্তা ও যৌন হয়রানি বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হটলাইন সেবা চালু...

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতার জন্য জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধন

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতার জন্য জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার সিএইসটি শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ০৪ঠা মার্চ ২০২৫ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ...

মার্ক কার্নি কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। আবার...

Recent Comments