শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন -
হোম মুক্তমত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ও কিছু কথা

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ও কিছু কথা

সরকার মো. আবুল কালাম আজাদ

১৭ই এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিলে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এ দিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতি বর্হিভূত এবং বিশ্বাস ঘাতকতামূলক যুদ্ধ শুরু করলে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। মেহেরপুর হয়ে ওঠে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী। মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ায় দু’ঘন্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, অস্থায়ী সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে। নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, বাংলাদেশ কৃষক লীগ এবং বিশিষ্ট কৃষি লেখক।

আপনার মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

লালমনিরহাটে আলু-পেঁয়াজ-সবজির বাজারে স্বস্তি

জেলার বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি, আলু ও পেঁয়াজের দামে স্বস্তি ফিরেছে। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পণ্যের কেজি প্রতি দাম কমেছে ২০ টাকা থেকে...

তরুণদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের চিত্র পাল্টে যাবেঃ বিএনপি মহাসচিব 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের মেধা শক্তি অনেক ভালো। তরুণদের...

সোমবার ট্রাম্পের জাঁকজমকপূর্ণ প্রত্যাবর্তন

ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা ওয়াশিংটনের ইউএস ক্যাপিটলে...

কৃষিতে নারীশ্রম, ফসলে চওড়া হাসি

অগ্রহায়ণ শেষে পৌষের আগমন। প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে শীতের দাপট। আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম শেষ। এখন চলছে নানা ধরনের শাক-সবজি আর শস্য...

Recent Comments