অধ্যাপক ড.হোসেন মনসুর
মহাবিশ্ব একটি ফুলানো গোলাকার বেলুনের মত। বেলুনটিতে যখন ফুঁ (বিগ ব্যাঙ) দেয়া হয়েছে তখন সময় শুরু হয়েছে (অর্থাৎ শূন্য সময় থেকে)। আবার বায়ু (পদার্থ-১.৫ x ১০৫৩ কিলোগ্রাম – matter ) ভর্তি করে বেলুনটি ফুলে শূন্য সময় (time) থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পরে বেলুন আকৃতির (যার ব্যাস ৯২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ) যে বিশাল স্থান (space) জুড়ে আছে, তা’ আমাদের মহাবিশ্ব (universe)। আর মহাবিশ্বের বিশাল শূন্য (?) স্থানে অনেক দূরে দূরে বিভিন্ন আকার-আকৃতির ১০০ থেকে ২০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি তার নিজস্ব বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন নক্ষত্র নিয়ে নিজে ঘুরছে এবং মহাকাশের কেন্দ্রকে পরিক্রমন করছে। অনেক প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না। যেমন সময় কি অনন্ত? সময়ের কি অন্ত নেই? পেছনে গেলে তো অন্ত (শূন্য) হয়ে যায়। বিগ বাং-এর আগে সত্যি কি কোন সময় ছিল না? অন্যদিকে, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। সম্প্রসারণ কি অনন্তকাল চলবে? একদিন তো ঠাণ্ডা হবে এবং মাধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষের টানে জড়ো হয়ে পিছু হোটবে। তখন হবে সময়ের শেষ সীমা। তা’হলে তো সময় অনন্ত নয়। সময়ের শেষ সীমা আছে। মহাবিশ্বের শেষ সীমা বা শেষ প্রান্ত নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। শেষ প্রান্ত কোথায় নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়। এর পরও প্রশ্ন থাকে, বিগব্যাং-এর পর মহাবিশ্ব কার মধ্যে সম্প্রসারিত হচ্ছে? মহাবিশ্বের প্রান্তের ওপারে কি আছে? আরোও কোন মহাবিশ্ব আছে? বিগব্যাঙের ঘটনা কি এই প্রথম অথবা এর আগে কি আরোও কোন বিগব্যাঙের ঘটনা ঘটেছে? মহাবিশ্বের প্রসারণ ও সঙ্কোচন, তারপর বিগবাঙ, এ প্রক্রিয়া কি চক্রাকারে ঘটে? এ কি প্রকৃতি অথবা বিধাতার এক অপূর্ব খেলা?
আরোও আমার মনে ব্যক্তিগত প্রশ্ন জাগে, স্থান এবং সময় শুরু হয়েছে বিগব্যাঙের প্রাথমিক অণু থেকে। অর্থ হচ্ছে এই যে, বিগবাঙের আগে স্থান এবং সময় বলে এখন আমাদের যে একটা উপলব্ধি বিগবাঙের আগে তার কিছুই ছিল না। বিগবাঙের ওই প্রাথমিক অণুই বিস্ফোরিত হয়ে আমাদেরকে স্থান ও সময় বলে কিছু আছে তার একটা উপলব্ধি সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক অণুর আগে যদি কিছুই না থাকে, তা’হলে কি ওই প্রাথমিক অণুই সৃষ্টিকর্তা বা গড যিনি স্ব-মহিমায় নিজে বিস্ফোরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন, যার প্রকাশিত রূপ বর্তমান মহাবিশ্ব? সে জন্যই কি বিজ্ঞানীরা হিগস্-বোজন বা ঈশ্বর কণা (God Particle) খুঁজে? সৃষ্ট্রির মধ্যেই কি সৃষ্টিকর্তা লুকায়িত? তিনি কোথায়? তিনি কি মানুষের ঘাড়ের শিরার চেয়েও কাছে? আমি কোন সাবজেকটিভ বা অবজেকটিভ আস্তিক এবং মার্কস্ বা লেনিনবাদী নাস্তিকদের মনে আঘাত দিচ্ছি না। আমার মনের অভিব্যক্তিই প্রকাশ করলাম মাত্র। বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে সামনে তাকিয়ে আশার আলো দেখতে চাই, পেছনে তাকিয়ে তো আমার প্রশ্নের উত্তর পাব না! আমার শিক্ষা তো তাদের মত নয় যারা পেছনকে সামনে রেখে অন্ধকারে আলো খুঁজতে চায়।
অস্থির বিশ্বজগৎ
আমাদের মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ, ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের বাইরে যদি কোন গ্যালাক্সি থাকে তাঁর আলো এখনোও পৃথিবীতে পৌছায় নাই। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে পৌছানো সবচেয়ে পুরাতন ফোটন ৪৫ থেকে ৪৭ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পথ অতিক্রম করে পৃথিবীতে পৌছেছে। তাই মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ধরা হয়। আমি যা’ বুঝি, তা’হল, বিগব্যাং এর পর প্রাথমিক অবস্থায় সম্প্রসারণের গতি ছিল আলোর গতির চেয়ে অনেক বেশী। তাই, ১৩.৮ বয়সের ফোটন ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষের পথ অতিক্রম করেছে। তারপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। এখনোও সম্প্রসারিত হচ্ছে ত্বরিত গতিতে (accelerated velocity)।
আমরা একটি অস্থির বিশ্বজগতের মাঝে অবস্থান করছি। তাইতো প্রায় ২২০ বছর ধরে দাপটের সাথে চলা নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব অসাড় হয়ে যায়। নিউটনের স্থির বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আইনস্টাইন অস্থির প্রমাণ করেছেন। মহাবিশ্ব নামক বেলুনের ভিতরে যা’কিছু আছে সবই গতিশীল, বিরামহীনভাবে ঘুরছে। নিউটন একটি স্থির বিশ্বের কথা ধারণা করে উপসংহারে বলেছিলেন মাধ্যাকর্ষণের টানে যে কোন বস্তু উপর থেকে নীচে পড়ে। ২২০ বছর পর ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন বললেন, মোটেই না। ওসব বস্তু এবং পৃথিবী একটা বক্র (বাঁকানো) স্থানকালের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাচল করে এবং তাদের ভর ও শক্তি দ্বারা বক্রতা তৈরী (প্রভাবিত বা প্ররোচিত) হয়। আইনস্টাইনের এই তত্ত্ব প্রমাণ করতে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সে প্রায় ১১৫ বছর আগের কথা। আইনস্টাইনের তত্ত্ব সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল। আমরা যদি বিমানে একটি নির্দিষ্ট গতিতে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাই তাতে যে সময় লাগবে, বিমানের একই গতিতে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকা আসতে তার চেয়ে বেশী সময় লাগবে। কারণ, পৃথিবী ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘুরছে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে আমি যদি পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে এক ঘন্টায় পাঁচ মাইল যাই, তাহলে দালানের ছাদে বসা একজন দর্শক বলবেন, হাঁ, আপনি পাঁচ মাইল গিয়েছেন। কিন্তু মহাশূন্যে অবস্থান করা একজন দর্শক বলবেন, না ভাই, আপনি তো দেখছি ১০০৫ মাইল সরে গেছেন। কারণ, পৃথিবী নিজে ঘন্টায় প্রায় ১০০০ মাইল গতিতে আবর্তিত হয়। সূর্য থেকে হিসেব করলে অংক আরোও বেড়ে যাবে। তাই বলি, সবকিছুই আপেক্ষিক, স্থির বলে কিছু নেই।
পৃথিবী তার আপন কক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ০.৪৬ কিলোমিটার গতিতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে নিজে আবর্তিত হচ্ছে এবং সূর্যের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটের গতিতে প্রদক্ষিণ করছে। চাঁদ নিজে ঘুরে না, কিন্তু সে ২৭.৩ দিনে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরে জন্যই আমরা সূর্য, চাঁদ, তারা, গ্রহসহ আকাশের সবকিছুই পূর্বদিকে উঠতে এবং সবাইকে পশ্চিমদিকে ডুবতে দেখি। গ্রহদের ভিতরে শুধু শুক্র ও ইউরেনাস ঘড়ির কাঁটার সিদাদিকে প্রদক্ষিণ করে। শুক্র পৃথিবীর দিন হিসেবে ২৪৩ দিনে নিজে একবার ঘূরে এবং ২২৫ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্য ঘুরে, তবে গ্যাসে তৈরী সূর্য কঠিন পদার্থের মত নয়। সূর্যের নিরক্ষীয় এলাকা তার মেরু এলাকার চেয়ে জোড়ে ঘুরে।
আমাদের সৌরজগৎ (সূর্যের পরিবার অর্থাৎ, পৃথিবীসহ সকল গ্রহ, উপগ্রহ, অ্যাসটেরইড, কমেট ইত্যাদি) ছায়াপথ গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ২৩০ কিলোমিটার গতিতে প্রদক্ষিণ করছে। ছায়াপথ গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সৌরজগতের প্রায় ২৩০,০০০,০০০ বছর লাগে। এই সময়কালকে মহাজাগতিক বছর বলে।
স্যাটেলাইট (উপগ্রহ)
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চিন্তাশক্তি বিকশিত হচ্ছে, দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে এবং অজানাকে জানার আগ্রহ প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকা ও রাশিয়া কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। বিশ্বজগতের রহস্য উদ্ঘাটনে জীবনকে বাজি রেখে মানুষ মহাশূন্যে বিচরণ করছে। তন্ন তন্ন করে খুঁজছে আকাশ গঙ্গাছায়া পথের বাইরে কি আছে। প্রয়োগ করছে নানা কৌশল, উদ্ভাবন করছে নূতন নূতন যন্ত্রপাতি। পৃথিবীর অনেক উপরে থেকে মহাবিশ্বকে খুব পরিষ্কার দেখা যায়, কারণ, পৃথিবী পৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলে ধূলাবালি, মেঘ বা জলীয় বাষ্প এবং গ্যাসের অণু থাকে। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের টেলিস্কোপ থেকে ধারণ করা ফটো বা ছবি পৃথিবী পৃষ্ঠের টেলিস্কোপ থেকে ধারণ করা ফটোর চেয়ে অনেক পরিষ্কার। সর্বপ্রথম তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ নামক একটি কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট মহাশূন্যে নিক্ষেপ করে। এর পর ১৯৫৮ যুক্তরাষ্ট স্যাটেলিট-১ নামক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে স্থাপন করে। যুক্তরাষ্টের কয়েক ডজন কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে আছে যেগুলো শুধু বিশ্বজগতের বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা কাজে ব্যবহার করা হয়। তথ্য-প্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে মানব কল্যাণে এখন পর্যন্ত ২,৬৬৬ কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করছে, যা’র মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩০৮টি স্যাটেলাইট আছে। রাশিয়ার ১৬০টির বেশী, যার মধ্যে ১০০টি মিলিটারি স্যাটেলাইট এবং চীনের ১০৫টি মিলিটারিসহ ৩২০টি স্যাটেলাইট আছে। এগুলো বাণিজ্যিক ও গবেষণামূলক কার্য সম্পাদন করে থাকে।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ
১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ নামে প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত অবজারভেটরি (মানমন্দির) পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৪৭ কিলোমিটের উঁচুতে স্থাপন করা হয়েছে। এই স্যাটেলাইট পৃথিবীকে বেষ্টন করা নিজ কক্ষপথে দিনে ১৫ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে। এর টেলিস্কোপটি বিচ্ছুরিত অতিবেগুণী থেকে ইনফ্রারেড পর্যন্ত আলোর তরঙ্গ দৈঘ্যের ছবি রেকর্ড করতে সক্ষম। গত শতাব্দির জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হাবল-এর নামানুসারে টেলিস্কোপের নাম দেয়া হয়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। মহাবিশ্ব তথা জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে নাসা (National Aeronautics and Space Administration)। নাসা ১৯৫৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্টের হয়ে যাত্রা শুরু করে আজ সৌর গবেষণার শীর্ষে অবস্থান করছে। নাসা আমেরিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক দায়িত্ব পালন করছে। কয়েক দশক ধরে মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটনে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ বড় বড় অবদান রাখছে।
মহাবিশ্বের অনেক ছবিই হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা। সংক্ষিপ্তভাবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের একটু ধারণা দিচ্ছি। হাবল স্পেস টেলিস্কোপে একটি ক্যাসগ্রেন রিফ্লেক্টর (প্রতিফলক) থাকে। ক্যাসগ্রেন রিফ্লেক্টর দু’টি আয়নার সমম্বয়ে তৈরী করা হয়। ক্যাসগ্রেন রিফ্লেক্টরের প্রধান বৈশিষ্ট হল, আলোর পথকে তার আগমনের প্রাথমিক আয়নার পথের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি প্রাথমিক কনকেভ আয়না এবং অন্যটি মাধ্যমিক কনভেক্স আয়না। টেলিস্কোপের উভয় মিরর বা আয়না দু’টি একটি অপটিক্যাল এক্সিস (অক্ষ) বরাবর লম্বভাবে খাড়া করে বসানো থাকে। প্রাথমিক আয়নাটির কেন্দ্রে একটি ছিদ্র থাকে, যার মধ্যদিয়ে আলো আইপিস বা ইমেজ সেন্সরে পৌছাতে পারে। এই টেলিস্কোপের সুবিধা হল, কেন্দ্রবিন্দুকে বা ফোকাল পয়েন্টকে প্রাথমিক আয়নার পেছনে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে রাখা যায়।
হাবল টেলিস্কোপ ১৩.২ মিঃ লম্বা এবং পেছনের দিকে যেখানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বসানো আছে সেদিকে ৪.২ মিঃ প্রস্ত, ওজন প্রায় ১২,২৪৬ কিঃগ্রাম; আয়তন ও ওজন একটা স্কুল বাসের মত। হাবল অবজারভেটরিটি দুইটা সোলার প্যানেল দ্বারা চালনা করা হয়। সোলার প্যানেল দু’টো সূর্যের আলোকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে ছয়টি বড় বড় ব্যাটারিতে জমা (স্টোর) করে। হাবল স্যাটেলাইট আপন কক্ষপথে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে এমন একটা অংশে আসে যখন স্যাটেলাইট ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী অবস্থান করে সূর্যের আলোর আগমনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে হাবল স্যাটেলাইট আর সূর্যের আলো পায় না, স্যাটেলাইট অন্ধকার হয়ে যায়। তখন স্বয়ংক্রিওভাবে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে স্যাটিলাইট আলোকিত হয়ে উঠে। অবজারভেটরিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তুরদিকে তাক করানোর জন্য ৪৫ কেজি ওজনের চারটি প্রতিক্রিয়া চাকা (reaction wheels) ব্যবহার করা হয়। প্রতিক্রিয়া বা রিয়্যাকশন চাকা ঘুরানোর জন্য নিউটনের তৃতীয় সুত্র প্রয়োগ করা হয়। যেদিকে তাক করানো হবে তার উল্টো দিকের চাকাকে টার্ণ করতে হবে। স্যাটেলাইট জানে কখন, কাকে, কোনদিকে টার্ন করতে হবে। ওসব ডাটা বা তথ্যগুলো আগেই কনট্রোল সেন্টার থেকে আপলোড করা থাকে। সে অনুযায়ী হাবলের মেইন কম্পিউটার হিসেব-নিকেষের পর লক্ষ্যবস্তুকে তাক (টার্গেট) করে চাকাগুলো ঘুরায়। অবজারভেটরিতে উচ্চ-নির্ভুলতা সম্পন্ন জাইরোস্কোপ ব্যবহার করা হয়। জাইরোস্কোপ হল, অত্যন্ত নিখুঁতভাবে গতির দিক পরিবর্তন মাপার যন্ত্র। নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই স্পেস ক্রাফ্টি ২০২০ সাল পর্যন্ত ভালভাবে কাজ করবে। এখন নাসার লক্ষ্য হল, ২০২১ সালে জেম্স অয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নামে আর একটা ইনফ্রারেড অবজারভেটরি স্থাপন করা।